সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

অভাগী

অতঃপর জীবনে সে এল,
যার সাথে আগে কখনো দেখা হয়নি।
যাকে কখনো কল্পনা করিনি
শিল্পী হয়ে তার ছবি হৃদয়ে আঁকা হয়নি
কবি মনের আকাঙ্খা হয়ে পদ্যে স্থান পায়নি
খুবই সাধারণ একজন।
  
তাকে বুঝতে বুঝতেই হয়তো যৌবন দীপ্ত নিঃশেষ হয়ে যাবে,
মাঝখানে হয়তো কিছু দিনের জন্য তার প্রেমও পড়ে যেতে পারি
কিন্তু জৈবিক তৃপ্তি নিবারণের পরই মনে হবে...
এ তো কেবলই কামনা
এখানে ভালবাসা খুঁজা পণ্ডশ্রম।
আহা,  কি অভাগী হবে একজন সে!
  
অথচ, তোমাকে কোথায় কল্পনা করিনি আমি?
প্যারিসে স্যেন নদীর তীরে,
বসফরাস প্রণালির উপকন্ঠে
মরুর বুকে জেগে থাকা নীল নদের মতো
অ্যামাজন, রুশ বিল্পব বা জি তাও এর সূরে
তোমাকেই চেয়েছিলাম গভীর অনুরাগে...
এইসব তো আর সেই অভাগী জানত না আগে।

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১

নির্লজ্জ

নির্লজ্জভাবে ভালবাসতে চাই।
লোকাল ট্রেনের বগিতে
অলিতে-গলিতে
বাসের সিটে, পার্কের ব্রেঞ্চে,
নাট্যমঞ্চে...
গ্রামে-গঞ্জে;
স্বর্গে, নরকে বা দিগন্তহীন কুঞ্জে।

যখন যেখানেই থাকিনা কেন,
যদি এক তিলক সুযোগ পাই।
কেবল নির্লজ্জের মত
আমি ভালবাসিতে চাই।

রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১

হেলেন; (Helen of Troy)

হঠাৎই হেলেনা'র সাথে দেখা,
প্রথমে তো আমি চিনতেই পারিনি
খানিকটা অন্যমনস্ক ছিলাম।

অতি সুন্দরীদের হাসিতে
ঠিক যতখানি অহংকার থাকার কথা
ঠিক ততটুকু অহংকার নিয়ে
ছোট করে একটি হাসি দিল।
বলল, "আমি হেলেন,
হেলেন অব ট্রয়।
জিউস কন্যা।"

তোমাকে কে না চিনে,
কে না জানে রূপের আখ্যান।
যার সৌন্দর্য ধ্বংস করে দিয়েছিল একটি নগর
কি ভয়ংকর সৌন্দর্যরূপ!
যেন শুভ্র তুষারে লুকিয়ে থাকা মৃত্যুর হাতছানি।

রমনীরা বোধয় সৌন্দর্যচর্চা উপভোগ করে।
আমাকে বলল, আচ্ছা আমি আসলেই ততটা সুন্দরী?

খানিকটা সময় নিয়ে বলেছিলাম,
হয়তো!
কিন্তু তুমি তো আমার আফ্রোদিতির মত নয়।

শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১

গুজব

হঠাৎ করে শহরে গুজব রটে গেল
তোমি নাকি আমার।
প্রতিদিন একসাথে দেখা রেস্তোরাঁর মালিকটিও
আড়চোখে দেখছে আজ
একটু দূরের মানুষগুলো ফিসফিস করে কি যে সব বলছে
নিরব হাসিতে অপবাদ ছড়িয়ে পড়ছে মানচিত্রের দিক দিগন্তে;
কেবল আমরাই কিছু জানলাম না।

চাইনা নগরীতে আকাঙ্ক্ষার দুর্ভিক্ষ
গলির দোকানে দোকানে নিকোটিনের বিক্ষোভ
কেবল আমি জানি আমি তোমার কতটা কাছে
আর তোমি জান তুমি আমার থেকে কতটা দূরে!
আহা! যদি, তোমি কানের কাছে ফিসফিস করে একবার বলে দিতে,
গুজবটা কিন্তু সত্যি।

শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১

সে

প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমরা এক সাথে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আপনাকে কিন্তু আমার একটুও পছন্দ না। এক প্রহর কেটে গেল এর মাঝে। প্রথমে ফাস্টফুডের একটা ঘরে চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চফ্রাই, সফট ড্রিংকস নামের কতগুলি আইটেম খাওয়া হল। পুরো শেষ করা যায়নি, এত দামি খাবার নষ্ট করার কোন মানে হয়না। বাকীটা পার্সেল করা হল।

এমনি অমনি তো আর ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একটি মেয়ের সাথে দেখা যায় না, আমাদের দেখা করার বিশেষ একটি কারণ আছে। লেপটপে অটোক্যাড নামক সফটওয়্যারটি নাকি লাইসেন্স নিয়ে জামেলা করছে। যদিও আমি খুঁজে কোন সমস্যা পেলাম না। সে গোল্লায় যাক, প্রতিবার এমনি ছোটখাট কিছু না কিছু একটা বাহানা খুঁজে বের করতে হয় আমাদের। আগেরবার একসাথে কিবোর্ড কিনতে বেরিয়েছিলাম, সেদিন খুব শহরের বাইরে একটা যাব বলে খুব তারাহুরোতে ছিলাম তাই দুই আড়াই ঘন্টার বেশি একসাথে থাকা গেল না। এবার সেরকম কোন তাড়া নেই।

শহরে ফিরার সময়ই তাকে কল করেছিলাম, চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ দিয়ে। ফোনে তখন বলেছিল, দেখা হওয়াটা নিশ্চিত না। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম ও বিকালে দেখা করতে বেরুবে এবং সাড়ে তিনটা বা চারটায় কল দিবে। মাঝখানে আরেকটা সাইট দেখতে চলে যেতে হল শহরের বাইরে।
গহরপুর।
নামটা চেনা চেনা, ভেবেছিলাম কাছেই হয়তো বা। পরে দেখি নগরী থেকে ২৭ কিমি দূরে। এত দূর জানলে যেতাম না। কোন কিছুর বিনিময়েই তার সাথে দেখা করা থেকে বঞ্চিত হতে চাচ্ছিলাম না। মেজাজ খানিকটা বিগড়ে গেলেও চেপে রাখার চেষ্টা করলাম, তারাহুরো করে সাইট ভিজিটিং শেষে যখন রওনার হয়ে খানিকটা এগিয়ে গেছি শহরের পথে তখনই বেজে উঠল ফোন। তাকে চল্লিশ মিনিট পর বের হতে বলে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম। রাস্তাটা বেশ প্রসস্থ, গাড়ির পরিমাণ খুবই কম।

উত্তেজনায়, খুশিতে আমার হৃদয় টলমল করছে তখন। এমন নয় যে, ওর সাথে প্রথম দেখা। এইভাবে অসংখ্যবার আমরা দেখা করেছি; প্রত্যেকবারই সেই উত্তেজনা, সেই আনন্দ। আমি ইচ্ছে করে একটু আগেই বেরিয়ে যাই, যেন ওর কখনো অপেক্ষা করতে না হয় আর তার জন্য অপেক্ষা করতে যে কি ভালো লাগে সেটাই বা কি করে বুঝাই।

ফাস্টফুট খেয়ে আমরা আরও খানিকটা সময় বসলাম; যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে থাকে খাওয়া শেষে এরা বেরুচ্ছে না কেন! ভদ্রস্থ সময়টুকু কাটিয়ে আমরা নেমে এলাম রাস্তায়। প্রায় দুশো মিটার দূরে একটা চায়ের দোকান। মেয়েটির দৃষ্টিতে আমি ভাল একজন সিনিয়র ভাই কিন্তু আমি এই সম্পর্কটিকে ভাল একটা বন্ধুত্ব বলতেই পছন্দ করি। মেয়েটি জানে আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি তাকে বলেছি আমার ভালবাসাটাকে উপেক্ষা করতে, কোন কারণেই আমার এই বন্ধুটিকে হারাতে চাই না আমি। সে এমন একজন যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে উপস্থাপন করতে পারি, আমার ভাল খারাপ অনুভূতি, সূক্ষ্ম থেকে খুশি, অপমান যা আর কাউকে এত নিঃসংকোচে বলতে পারিনা। না জানি কত নারী জীবনে এসেছে বা আসবে কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তার মতো কেউ হবেনা।

ক্বিন ব্রিজের নিচে এক কাপ খেতে বসে এক জায়গায় কেউ আমার সাথে বিরক্তিহীনভাবে ছয় সাত ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবে না। মনে কাছে একদিন দশঘন্টা এক সাথে গল্প করার পরও খানিকটা আফসোস নিয়ে শেষ হয়েছিল সেদিনের আড্ডা। শহরের প্রতিটি রাজপথ আমাদের চিনে। কাঁধে ব্যাগ আর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলছে দু'জন মানুষ।

প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমরা এক সাথে ঘুরার এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আপনাকে কিন্তু আমার একটুও পছন্দ না। আমি বললাম, এমন মানুষের সন্ধানই আমি করছিলাম। শক্ত, প্রস্থরখন্ডের মত শক্ত হবে তার হৃদয়। আমি পাগলের মতো তাকে ভালোবাসবো আর সে এতটুকুও গলবে না।

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

এক মুঠো ভালোবাসা

তোমার প্রতি আমার কোন রাগ নেই
অনুরাগ আছে,
অপেক্ষা নেই
প্রতিক্ষা আছে,
পাওয়ার উচ্চাকাঙ্খা নেই
নেই হারানোর ভয়ও।

আছে কেবল কোন রকম শর্ত ছাড়া
এক মুঠো ভালোবাসা।


November 19, 2017

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

একাকীত্ব নির্জনতা

আমি ভালবাসি
আমার একাকীত্ব
আমার নির্জনতা;
প্রবল হারিকেন আছড়ে পড়ার পর
উপকূলের শুনশান নিরবতা।

আমি ভালবাসি
জোয়ারে লাগামহীন তরীর মত
স্রোতের সাথে ভেসে যাওয়া,
নাটাইবিহীন ফানুস হয়ে
নীলাকাশের স্পর্শ পাওয়া,
কালান্তরের খেলা শেষে
মহাশূন্যে বিলীন হওয়া...
আর চুপ থেকেও বলে দেওয়া সব কথা।
আর আমার একাকীত্ব, আমার নির্জনতা।

শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

উন্মাদ অশ্ব

আমি ছুটি
যুদ্ধাহত অশ্বের ন্যায় ছুটি
তার থেকে পালাব ছুটতে থাকি;
এক পৃথিবী ব্যাস দূরে যাই।
সে যখন দূর মেক্সিকান উপসাগরে;
আমি তখন বুড়িগঙ্গায়।

নর্দমার পানিতে ছোট একটি নৌকায়
এক কাপ চা হাতে
সম্ভাব্য পাশে থাকা মানুষ হিসাবে
উন্মাদের মত তাকেই ভাবছি আমি।

শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১

জন্ম-জন্মাতর

জন্ম-জন্মাতর বুঝিনা হে প্রিয়।
  
সে যখন সামনে আসে
নিরেট দেহ খুঁজে পায় প্রাণ,
যেন আমার জন্ম হয় আরো একবার।
  
তার হাসিতে বয়স হয় ষোল,
পরিস্ফুটিত, প্রাণবন্ত;
ফোটে শিউলি, আসে শরত-বসন্ত
পুষ্প বৃষ্টিতে ধরণী একাকার;
  
তার অভিমানে হিয়া খুঁজে অন্ত
নিথর প্রাণ ভূলে দিগন্ত
তৃষ্ণার্ত মরু ভাস্করে ছাড়খার।

সে যখন সামনে আসে  
নিরেট দেহ খুঁজে পায় প্রাণ,
যেন আমার জন্ম হয় আরো একবার...

শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

পরিণতি

অতঃপর স্রষ্টা তাহাকে বলিলেন,
"যাও, প্রস্তরখন্ড সন্ধান কর।
কঠিন প্রস্তর,
হীরক চূর্ণ করিতে পারে, এমন কঠিন প্রস্তর।
আর আলোর মত নরম তুলতুলে হাত দিয়ে
ভাঙার চেষ্টা করিতে থাকো।
চেষ্টা করিতে থাকো যতক্ষণ না
ফের জাগিয়া ওঠে বিদর্ভ নগরীর দ্বার; 
তার পুঞ্জে-কুঞ্জে শিউলির আপাদমস্তক ছেয়ে থাকা স্বর্ণলতাকে
কেহ পরগাছা বলিয়া উপেক্ষা করিবে না আর।"

বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

বিলাপ

সে তার নাম জপ করে, বারংবার
নিঃশ্বাসে একবার, প্রশ্বাসে আরেক বার।
আহ্, এরিস, আহ্! বেচেঁও মৃত যেনো
এক সাথে তিন বার, কখনো কখনো।
কে জানে? হয়তো এই ছিল তার নিয়তি
"আফ্রোদিতি, আফ্রোদিতি, আফ্রোদিতি"।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১

বৃথা বিসর্জন

ছেলেবেলায় আমার নদী জমানোর শখ ছিল।
পদ্মা, মেঘনা, ফেনী, করতোয়া'র মত
তের নদী হয়ে গিয়েছিল।
সাত সমুদ্রও নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিলাম।
সাত সমুদ্র তেরটি নদীর ওপার নাকি
আমার সেই রাজকুমারীর রাজ্য।
  
চতুর্দশেই পেয়ে গেলাম পার্বতীর দেখা।
ব্যাস, বোকার মত অমনি করে দিয়ে দিলাম
আমার সব সম্পদ।
বুঝতে পারিনি সে হবে অন্য কোন জমিদারের ঘরণী।
সেদিনের সব হারানোর আত্মচিৎকার
আজও ভূলিনি আমি।
  
একদিন দেখা পেলাম কয়েকটি কাঠপেন্সিল
আর পুরাতন এক তুলির দেখা
এগুলো দিয়ে নাকি স্বপ্ন আঁকা যায়।
আমি স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম
আর ভেঙে গেল পেন্সিল
নীল আলোয় রক্তাক্ত হল হৃদয়।
  
তারপর আমি হলাম কবি;
একালের উদ্বাস্তু।
অনেক খুঁজে একটি ছোট নদীর দেখা পেলাম।
রূপসা।
এই ছোট্ট নদীটাকে সাগর বানিয়ে
আমি নাম দিলাম রূপসাগর।
পণ করেছিলাম যাই হোক না কেন
এ নদী আমি কাউকে দিব না।
  
এ নদীটাকেও রাখতে পারলাম না,
একদিন প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি এল
তাদের উপঢৌকন না দিলে মান কি আর রয়?
আমার কাছে এই নদীটি ছাড়া আর কিছু ছিল না তখন।
আমি ভীতসম্ভ্রমে খানিকটা অগোচরে তার বাহনে রেখে দিলাম।
  
সে যখনই টের পেল, ছুঁড়ে ফেলে দিল।
তার জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত করে দিবে
এমন রাজকুমারের অভাব হবেনা জানি।
কিন্তু আর কেউ তার অতিপ্রিয় বস্তুটিকে উৎসর্গ করবেনা
সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
  
আমার অতিপ্রিয় বিসর্জনও তার জন্য যথেষ্ট হবে না
সে আমি জানতাম।
তবুও জেনে শুনে আরও করা একটি ভুল।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১

নিখোঁজ থ্যানাটোস

দুই পক্ষ যুদ্ধ করছে।
তারা ভয়ংকরভাবে আহত হচ্ছে
কিন্তু মৃত্যু হচ্ছে না।
মৃত্যু কোথায়?
মৃত্যু!

এপিটাফ; পৃষ্ঠা ১০১

কয়েকদিন আগে একজন মানুষের মৃত্যু হল
অথচ সভ্যতার চরম শিখরে থাকা সমজাতীয়রা টেরই পেল না।
সে স্বভাবে ছিল ব্যক্তিত্বহীন
ভাবে কবি, এ কালের উদ্বাস্তু।
প্রেয়সীর প্রতি তীব্র আকাঙ্খা
আরও একবার মেরে ফেলল তাকে।

কবি তার কাঙ্খিত নারীর স্পর্শ পাবে
এ নিয়ম পৃথিবীতে নেই।
কবি সে কথা জানত।
তাই তো কেবল আকাঙ্খা করেছে
স্পর্শ চায়নি।
এ অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হল।
কবি মনের সঞ্চিত ভালবাসাটুকু উজার করে দিতে চেয়েছে।
বিনিময়ে কিছু পেতে চায়নি।

ভালবাসার দুর্ভিক্ষ চলছে নগরে নগরে।
কর্পোরেটের ভেজাল পণ্যে প্যারিসের বুক থেকে হারিয়ে গেছে
খাটি পারফিউমের সুভাস,
পৃথিবী হয়ে ভালবাসা শূন্য।
আর ছটফট করতে করতে মরে গেল কবি।

এখন সে একটা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের কাঠামো
তার হার্ট কেবলই রক্ত পাম্প করার মেশিন
মাথায় প্রসেসিং ইউনিট।
পা দুটো শরীরের ভার বয়ে বেড়ায় গ্লোবালাইজেশন এর চক্করে পড়ে।
হয়ত এমনি করে আরও কয়েক যুগ যন্ত্রগুলি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে।
....
কযেক যুগ পর যখন হার্ট পাম্প করবে না
কিংবা প্রসেসিং ইউনিট স্তব্ধ হয়ে যাবে
সে দিন তোমরা তাকে দেখতে আসবে।
আফসোস করবে, ডাকবে ফের উঠার জন্য।
তখন আর ডেকে কি লাভ...
ও তো মরেছিল তারও অনেক আগে
কে জানে তখন একবার ডাক দিলে
হয়ত কবি আবার বেঁচে যেতে পারত।


Sep 19, 2021

আমি ভালো নেই

আমি ভালো নেই প্রিয়তমা,
আমি ভালো নেই;
তোমার ভাবনা জুরে কর্পোরেট কনক্রিট
আমার জায়গা কই?

অদ্ভুত মৃত্যু

এ ডাকে, ও ডাকে;
ইচ্ছে করে না সাড়া দিতে
কেন জানি মনে হয়
মনে হয়, আমি মারা গেছি।
অনেক দিন আগে
কোন এক অতি সাধারণ রাতে।

কিন্তু অদ্ভুত সেই মৃত্যু!
কেবল একবার, একবার যদি ডাক তোমি
আরও একবার,
আরও একবার বেঁচে যেতে পাবর আমি।

শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

নিরবতা

নিরবতারও একটি ভাষা আছে
কি তীব্র তার অনুভূতি
যেন দুর্ভিক্ষের মত তীব্র
 
নিরবতা যেন বলে দিয়েছে
থেকে যাও বলার পরেও যাকে ধরে রাখতে পারিনি
কিছু না বলার পরও সে ফিরে এসেছে
ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রবল হয়ে
যেন সামনে থাকা যে কোন বাঁধা চূর্ণ হয়ে যাবে নিমিষেই


Oct 07, 2021

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

मेरे ज़िंदह

जब तू मेरे साथै

असा लगताहै, तमाम दुनिया मेरे साथै

इ नहीं की तेरे बिना जीना नहीं सटका।


ऐसा जीना में न खुस हे

न सपना

बस एक ज़िन्दगी

जो हर पल मोत का इंतज़ार कोरे।


तू मेरे खुस

मेरे हसी

मेरे  सपना

तुहि तू मेरे ज़िन्दगी।

বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নিঃসঙ্গতার একশ এক

প্রতীক্ষায় কাটানো দীর্ঘ অপেক্ষাটাও ছিল আনন্দময়
অথচ, এক মুহূর্তের উপেক্ষায়
নিজেকে কেবল মৃতই বলে মনে হয়।

হয়তো বা তারচেয়েও বেশি শান্তি মৃত্যুর পর,
হায়! নিঃসঙ্গতায় কাটানো আমার একশ এক বছর।

বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অবস্থান ত্রুটি

ট্রেনটা ছুটছিল তার মতো করেই,
চিরচেনা ঝকঝক শব্দে।
আর মনে হচ্ছে তোমার কাছ থেকে সরে যাচ্ছি দূরে
একটু একটু করে।
  
আমার যেন অন্য কোথাও থাকার কথা ছিল
ঝাপসা আলোয় রূপসার পাশে
এক কাপ চা হাতে
এক নিস্তব্ধ মূহুর্ত ঘেরা সন্ধ্যে।
কেবল শরৎ নয়
সারা অব্দ মাতিয়ে রাখিব
আমার শিউলির গন্ধে।
অথচ, এসেছি আমি ইতিহাসের পাতায়
লিখে রাখা নিয়তির ফেরে
আর মনে হচ্ছে তোমার কাছ থেকে সরে যাচ্ছি দূরে
একটু একটু করে।

রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ভোরের স্বপ্ন

কি অদ্ভুত খাপছাড়া একটা স্বপ্ন প্রথমে একটা নগ্ন নারীমূর্তির সাথে ইচ্ছেমত ঝগড়া হল ধ্রুব বোধহয় তাকে চিনে; সেই প্রাক্তন যার বিয়েতে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিল এই সকল অতীত মানুষকে পরবর্তীতে লজ্জাকর বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিলেও ধ্রুব কোন লজ্জা হয়না সে গর্ববোধ করে এই ভেবে যে সে কাউকে হৃদয় উজাড় করে ভালবাসতে পেরেছিল সেই সব এখন হারিয়ে যাওয়া গল্প


স্বপ্নটা হঠাৎই অন্য দিকে মোড় নিয়ে রাস্তায় একটা চলতে থাকা গাড়িতে চলে এল ধ্রুব এখন গাড়িতে খুব দামী কার নয় কিন্তু গাড়ির উপরিভাগ খোলা চার সিটের গাড়িতে সে পেছনে বসা আর তার কাঁধে মাথা রেখে একজন তরুণী বাতাসের ঝাঁপটা চুল পুরোটা মুখ ঢেকে দিলেও ধ্রুব জানে বালিকাটির প্রশস্ত ললাটের নিচে যুগলবন্দী ভ্রু বাঁশির মত নাকের উপরিভাগে ডাগর আঁখি, নিচে পাতলা ঠোঁটের উপর প্রায় অদৃশ্য সৌন্দর্যবর্ধক সোনালী পশম গলায় মধ্যরেখা একটু ডানে খানিকটা নিচের দিকে একটা তিল দেখা না গেলেও কত পরিচিত একটা অবয়ব, যেন জন্ম জন্মান্তরের স্মৃতি দিয়ে তৈরী করা রূপসা। রূপসা নামের মানেটা জানে না ধ্রুব, তার কাছে রূপসা মানে রূপের সাগর

কোন এক অজানা কারণে রূপসার চোখে পানি রূপসা শক্ত করে ধ্রুব হাত ধরে আছে আস্তে করে ভাঙা গলায় বলল, তুমি যে আমাকে পছন্দ করতে সেটা সাবাই বুঝতে পারল, অথচ...
বেশি কান্নায় রূপসার কথাগুলি খুব স্পষ্ট নয়, ধ্রুব প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে রূপসা চোখে পানি দেখেধ্রুব বলল, চুপ কর চুপ কর
ধ্রুব হাতে রূপসার হাত, বুকে মাথা, ভালবাসার জলে অশ্রুসজল চোখ, ভেজা টিশার্ট। এর চেয়ে আর বেশি আর কিছু চায়না তবুও কি যেন একটা কষ্ট হৃদপিণ্ডের ওজন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন


ঘুম ভেঙে গেল ধ্রুব, ঊষার আভা পৃথিবী আলোকিত করে তুলছে একটু একটু করে দূরে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে, হারিয়ে যাচ্ছে আরও গহীনে। একটু একটু করে বাড়ছে পাখিদের কলরব। ভেজা চোখে হাত দিয়ে বর্ণহীন তরলের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় ছোট একটা হাসি ফুটল ঠোঁটের কোণে "চোখে পানি, ঠোঁটের কোনে এক চিমটি হাসি" 'আমি তপু' সেই প্রিয়াঙ্কা যেন ফিরে আসে রূপসা হয়ে এরচেয়ে আর বেশি আর কিছু চায়না ধ্রুব।

শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

The Spool of Yarn

 How do I explain the state of my heart?

As like that, The kite has found the spool of yarn again.


The kite understands the meaning of freedom.

Only yarn can help it to fly,

To touch the sky.


This is the power of bonding.

This is the power of love.

শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

উপেক্ষা

প্রিয়তমার ছোট ছোট উপেক্ষাগুলি
একটু একটু করে মেরে ফেলে।
  
খুবই সূক্ষ্ম সে উপেক্ষা।
আজ হয়ত সে কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে
আমার দিকে আগের দিনের মত নিয়ে তাকাল না,
কিংবা হয়তো কথা বলছে আগের মতই
কিন্তু বাক্যের মাঝে আসক্তিটা নেই
সেই আসক্তির অভাব
...বেচে থাকার অভাব কমিয়ে দেয় অনেকখানি
তার সামাজিক হাসিতে পৃথিবী করে দেয় গোলমেলে
আর একটু একটু করে মেরে ফেলে।

সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১

আকাঙ্খা

আমার সুপ্ত আকাঙ্খাজুরে তোমাকে চাই
খুব গভীরভাবেই চাই।

তোমার ফেলে দেয়া বাদামের খোসা
স্প্রিং ছুটে যাওয়া চুলের ক্লিপ
চিরুনীতে লেগে থাকা চুল
কেটে ফেলে দেওয়া নখ থেকে শুরু করে
অন্তিম লগ্নে ICU'তে খোলে ফেলা নল পর্যন্ত
একটা মুহুর্তও হারাতে চাই না।

দেয়াল

হঠাৎ মনে হয়
এ যেন সবই এক ভ্রম
ক্ষণিকের করা ভূল,
নেহাতই বেখেয়ালে…
  
আমি নিজের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে
বারবার আছড়ে পড়ি
তার আবেগহীন দেয়ালে।

শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

শুভ্র ছায়া

 তোমার চেনা শহর থেকে যদি

      হঠাৎ হারিয়ে যাই শুভ্র ছায়ার বেশে?

অচেনা নগরে, পথে ঘুরে ঘুরে,

                     তুমিও যাবে কি সে দেশে?

বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

পেশা ও ধর্ম

বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম নিয়ে যতটা মুখচর্চা করে আসলে কিন্তু ততটা ধার্মিক নয়। বেশির মানুষ ধর্মকে একটা হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিকভাবে বা সমাজিকভাবে ধর্ম যতটা কার্যকর ঠিক ততটাই অকার্যকর পেশাজীবীদের প্রেক্ষাপটে। সে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী যে পেশাতেই থাকুক না কেন। অধিক মুনাফা পেতে যে কোন হাল পর্যন্ত যেতে পারে।
  
বিভিন্ন মাহফিলে লেকচার দানকারি আলেমদের-ওলামারাও কিন্তু এর বাইরে নয়। এক ঘন্টায় এদের পারিশ্রমিকটা একবার দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর এক মাসের বেতনের কাছাকাছি হবে। অজপাড়াগাঁয়ে মক্তবের হুজুরদের এত সুযোগ নেই তারা ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজ দিয়ে আলগা ইনকাম করে নেন। তবে বেশিরভাগ গ্রামের হুজুরের মাসিক যে বেতন পান তা শুনলে আপনার আমার মত সাধু শ্রেণী মাথানত করে চুপ-চুপকে সটকে পড়ব।
  
একদিন পরিবহন ধর্মঘট হলেই রিক্সাওলার মত ছোট ছোট পরিবহনকর্মীদের ঈদ এসে যায়।
"ব্যবসায় সত্য কথা বলতে নেই" এই ধরনের প্রবাদই প্রচলিত আছে তাদের মহলে। ব্যাবসার কাজে অনর্গল মিথ্যা বলতে একটুও দ্বিধা হয়না মধ্যপ্রাচ্যের লেবাসে থাকা সমাজের সম্মানিত হাজী ভাইটির। কৃষক থেকে কিনা দশটাকার ধান পঞ্চাশ টাকা কেজি হয়ে যে চাল বাজরে আসে সে চালের দিকে তাকিয়ে থাকে খোদ কৃষকই। তার মানে এই না যে কৃষক তার ফল মিষ্টি করার জন্য রাসায়নিক ক্যামিকেল ব্যবহার করবে না আর আপনি বাজার থেকে ফরমালিন মুক্ত মাছ নিয়ে আসবেন।
  
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী তো আছেই, সেখানে পিওনের পর্যন্ত আলগা ইনকাম থাকে। টেবিলের তলায় বা চৌরাস্তার ট্রাফিক সিগনালে কোথায় নেই?
  
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি দেখলে কখনো মনে হয় না এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ছাত্রদের টিউশন ফি টাকা দিয়ে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে বেড়ান ফ্যাকাল্টি সদস্যরা।
  
সরকারি মেডিকেল সার্ভিসকে পুঙ্গ বানিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে চলছে রমরমা ব্যবসা। সাতশ টাকা একজন রোগীর ভিজিট যেখানে দেশের ৫২.৯% মানুষের ইনকাম ১০৭ টাকা বা তা নিচে *(বিশ্বব্যাংক ২০১৬)। এইখানে বেশি কিছু বলা যাবে না, টাকা নাই এখানে কেন আসছেন? সরকারি হাসপাতালে যান।
  
ধর্ম এখানে এসে আটকে যায়। আমরা ধার্মিক ঘরে, ধার্মিক সমাজে কিন্তু আমাদের পেশাগত জীবনে ধর্ম কিংবা ন্যায় বিচারক অজ্ঞান হয়ে যায় কারণ This is business.

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

চুপচাপ গল্প

সবুজ ঘেরা ঘাস
আমার আহুতি দীর্ঘশ্বাস;
তার নিচে চুপিচুপি কত গল্প।
  
পিঁপড়েরা বাঁধে বাসা
ঝগড়া আর ভালবাসা
আমিও যে চাই অল্প।

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

শেফালীর ডাক

অসংখ্য ফুলের প্রেমে পড়েছি।
 
গোলাপের মত রাজকীয়
রজনীগন্ধার মত কামনীয়
কিংবা কলমিফুলের সরল শংকা;
 
অথচ,
সব ছাপিয়ে মনে গেঁথে থাকে
কখনো আমার না হওয়া
শিউলি তরে, তীব্র আকাঙ্খা।

বাঁ পায়ের শিল্পী

অতঃপর প্যারিসের বুকে পড়ল তার পদচিহ্ন।
  
ফরাসি বিপ্লবের কয়েক শতাব্দী পর
আরও একবার জনতা নেমে এল রাজপথে,
ছবি আর কবিতার দেশে
নতুন আরেক শিল্পের আকাঙ্খায়।
  
হে বাঁ পায়ের শিল্পী,
ভালবাসার শহরে তোমাকে স্বাগতম।

প্রিয় নদী রূপসা

প্রিয় নদী রূপসা,
  
বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ
অরণ্য হারানো জোছনা
কিংবা প্রান্তরের সবুজ ধ্বনি;
  
এদের কেউ আমার মত করে
তোমাকে চাইতে পারে নি।

রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

আফ্রোদিতি

অনেককাল আগে আমি একটা ঘুড়ি হয়ে উড়ছিলাম

মৃদু হাওয়ায় নাটাইটানে ভালই চলছিল সব।


কিন্তু সময়ের সাথে আমার অতৃপ্ত আকাঙ্খাগুলি জাগ দিতে থাকে।

তখন উপলব্ধি হয়,

নাটাইসুতার পরিধি আমার জন্য পর্যাপ্ত নয়।


জিউসের ইশারায় একটা আচমকা ঝড়ে

সুতা ছিঁড়ে ঘুড়ি মুক্ত হয়ে গেল

আমি ছুটে চললাম দিগন্ত থেকে দিগন্তে।


অবশেষে যখন নিচে আছড়ে পড়ার কথা

তখন ঘুঘু পাখির বাহনে

গোলাপ নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল একজন।

তার শরীর যৌবনময় রূপ

চোখের গভীরতায় কামনা

আর হৃদয়ে প্রেমের মোহনা।


২. (কথোপকথন)

-  কে তোমি?

=  আফ্রোদিতি

সেই আফ্রোদিতি...

যার জন্মের সাথে জলের গভীর সম্পর্ক।

আমি বিড়বিড় করে বললাম,

-  আফ্রোদিতিআফ্রোদিতিআফ্রোদিতি।


-  প্রিয়তমা তুমি কি আমার?

একটা কঠিন হাসি দিল সে।

হাসির মাঝেও এত কাঠিন্য থাকতে পারে জানা ছিল না।

=   হ্যাঁনা আবার হ্যাঁ

-   এটা আবার কি রকম?

=  এই মুহূর্তে আমি তোমার

  কিন্তু এই প্রিয়মিলন কেবলই ক্ষণিকের

  তোমার হৃদয়ে আমার প্রেম অন্তহীন।


-    চুপ কর আফ্রোদিতি,

  তুমি জীবিতই আমাকে সমাধী দিলে।

  আজ থেকে আরিস থাকবে রণক্ষেত্রে

  তোমারমত হাজারও প্রেয়সীকে নিঃসঙ্গ করে দিবে।

  আর পাষণ্ডহৃদয়ে প্রগাঢ় বিরহী প্রেম নিয়ে

  একটি নামই জপ করবে অনন্ত দিবাতিথি

  আফ্রোদিতিআফ্রোদিতিআফ্রোদিতি।

  

 

 

 


প্লট ও প্রেক্ষাপটঃ

প্রাচীন  গ্রিক পুরাণ অনুসারে দ্বাদশ অলিম্পিয়ান হলেন সর্ব দেবতার মন্দিরে অধিষ্টিত বারোজন প্রধান দেবদেবী।কেন্দ্রীয় চরিত্র জিউসমূল চরিত্র আরেসতার প্রেয়সী আফ্রোদিতি,আফ্রোদিতির স্বামী হেফেসটাস (সম্পূর্ণভাবে উহ্যএই চারজনকে নিয়ে কবিতার প্রেক্ষাপট। মূলত আরেস  আফ্রোদিতির অপূর্ণ প্রেম কবিতার বিষয়বস্তু। পুরাণ এর চরিত্র  ঘটনার সারমর্ম নিয়ে কবিতার উপাখ্যানটি নিজের মত করে বর্ণনা করা হয়েছে।
----লেখক।

 

শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

সাদা পাতা

বহু দিন ধরে একটা গল্প নিজের ভেতর চেপে রেখেছি,
একটা নিরব ভালবাসার গল্প।
না, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না
হৃদয়কে দমিয়ে রাখতে পারিনি শেষ পর্যন্ত,
যতই নিজেকে বোঝ দিতে চেয়েছি
ততই অবুঝ মন উথলে ওঠেছে।
   
অথচ;
আমার জীবনে তার অবস্থান ইরেজারের মত,
যার স্পর্শে অতীতের গল্পগুলি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে;
কিন্তু, সে কেবল মুছতেই পারে...
ইরেজার দিয়ে তো আর গল্প লেখা যায় না।
  
এ জন্মটা না হয় একটা সাদা পাতা হয়েই কাটিয়ে দিলাম।

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

ফিলিস্তিন

তোমার মিথ্যে চোখে সে সত্যই খোয়াব বুনেছি
তার মাসুল দেবে কে?
ল্যাজারাসের মত মৃত্যু পর জাগা
জেরুসালেম বসন্ত বিপ্লবে।
  
বোগেনভিলিয়ার কুঞ্জে কুঞ্জে রক্তের প্রতিধ্বনি
সে দাগ না আর মুছিবে,
অগণিত লাশের মূল্য চুকিয়ে
সে স্বর্গভূমি চায় কে?

শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১

আলবাট্রস

কবিতা লেখা দুষ্কর হয়ে গেছে।
চিত্রকর্মের মতো একটি রূপ ধারণ করতে চায়।
ভাগ্যিস, আমি এদুয়ার মত চিত্রকার নই!
নয়তো, নিজের ভেতর লুকিয়ে রাখা কল্পটা
নগ্ন অলম্পিয়া হয়ে লটকে যেত দেয়ালে।

আমি সেই মুক্ত আলবাট্রস যে ভালবাসা চুপকে;
ওড়ে যায় সুমেরু দিগন্ত থেকে কুমেরু দিগন্তে।

বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১

फिर मिलेंगे

 

कितना वक्त गुजरगया 

तुम हरि तलाश में,

फिर जब तुमसे मिला

तुम दुसरेके साथ सफर जुरलिया

 

इस जन्म तुम मेरी नहीं

अगले जन्म फिर मिलेंगे

शायद अगले जन्म

या अगले जन्म ।

 

कितना जन्म लगेगा ये तो बता नहीं,

मगर तुमसे मिले बिना इस दुनियाको

अलविदा नहीं कह सकता ।

 

by

Md. Asmaul Hossen Kawsar

সোমবার, ৭ জুন, ২০২১

একজন সে

একজন মানুষকে আমি খুব ভাল ভাবে অনুভব করতে পারি।
একাকীত্বের সময়গুলিতে তার উপস্থিতি পৃথিবীর সকল যাতনা ভূলিয়ে দেয়;
দুর-আলাপনে সকালে যখন তার কলে ঘুম ভাঙে
মনে হয়, এর চেয়ে আর ভাল করে দিনের শুরু হতেই পারে না।

সারাদিন কেবলই আকাঙ্খা জাগে
যদি একবার দেখা হয়ে যায় তার সাথে
তবে দেখা হওয়ার পর যে খানিকটা শূণ্যতার সৃষ্টি হয়
সেটা অস্বীকার করলে মিথ্যা হয়ে যাবে।
ফের কবে দেখা হবে কে জানে? 

রাতে যদি মোবাইলে কথা বলে
তার সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়
মনে হয়, পরবর্তী সকাল পর্যন্ত একটা স্বপ্নের ঘোরে কাটিতে দিতে পারি।

ভালবাসা না'কি টের পাওয়া যায়
আমি যা অনুভব করি
তাই আমার কাছে সত্য।

শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

অধরা স্পর্শ

যতবার কোন নারীকে স্পর্শ করতে চেয়েছি
দিব্য আলোয় কিংবা কল্পলোকে,
ততবারই ভেসে ওঠে তার ছবি।
অথচ, আমি তার নাম দিয়েছি "অধরা স্পর্শ"।

তাকে না দেখা যায়, না ছোয়া যায়
কেবলই ঝাপসা আভা;
অমৃত শুধা তার অনুভূতি জুরে
শ্রাবণ ক্রান্তিকালীন প্রভা।
  
আমি সহস্র শতাব্দীর টগবগে তরুণ
বিদ্রোহী এক কুমার
যে স্পর্শে মৃত্যু লিখা, তাকেই খুঁজি;
হয়ে যেতে ছাড়খার।

বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

অন্বেষণ

কি খুঁজে বেড়িয়েছিলাম জানিনা।
হয়তো জানতাম,
নিজের উপর আস্থা ছিল না;
তাই তো না বলা কথা নিয়ে
অবিরাম ছুটে চলা;
উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটে চলার সাথে
অবচেতন মনের আকাঙ্খা।
  
এক হাজার দুইশ সাতচল্লিশটি দূর্গ চুরমার হয়ে গেল,
একে একে পরখ করা হল সব পুষ্প।
সবই যেন হয় ভূল;
তেইশ হাজার পাচশ চুয়াত্তর প্রজাতি থেকে
খুঁজে নিয়েছি তাঁকে;
ভালবাসার কলমিফুল।

মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১

মিথ্যে কল্প

তোমাকে পলক দেখিতে
সুপ্ত মনের আঙিনাতে
সাজিয়েছি কত মিথ্যে কল্প;
আরও একটু যাও থেকে
গোধূলির আভা মেখে
হয়ে যাক আরও একটা গল্প।

ভাল থেক

আমাকে ছাড়াও তুমি ভাল থাকতে পারবে।
আফসোস, যদি আমিও পারতাম!
যদি আমিও পারতাম, শ্যামা;
তোমার কাছে আর আসিতাম না, প্রিয়তমা।

শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

ফেরা

তোমায় একবার দেখার লোভে
স্বর্গ ছেড়ে ধূলোর পৃথিবীতে পা রাখার সাহস করেছিলাম।
দেখিতে কেবল আরও একটিবার
জন্মাতে যেন পারি সহস্রবার...
 
জন্ম ব্যাপারটা মৃত্যুর মত এত সহজ নয়।
ঠিকে থাকার লড়াই প্রতি মুহূর্তে
অস্তিত্ব বিলীন হবার আশংকা,
তীব্র আকাঙ্খায় ভেতর জলে পুরে ছাড়খার
তবুও ফিরে এসেছি আবার।
দেখিতে কেবল আরও একটিবার।

বুধবার, ২৬ মে, ২০২১

প্রণয় গাঁথা

We don’t fall in love anymore,
Just pick someone, better in adjust.

অনেককাল আগে আমি প্রেমে পড়েছিলাম।
কত স্নিগ্ধ, কত পবিত্র, কত অসাধারণ তার অনুভূতি!
বলে কি ব্যাখ্যা করা সম্ভব?
যেন স্বর্গ নেমে আসে মৃত্তিকায় ধরণীতে
কি আকাঙ্খা, কি উচ্ছ্বাস, কি কামনা
কেবল দেখিতে একটিবার
যেন করিতে পারি সব।

না দিন না রাত, ভোর কিংবা মধ্যরাত
কত অপেক্ষা, শত প্রতীক্ষা
কেবল পাওয়া যায় যদি তার ছায়া...
জাগরণ-নিদ্রায়, চেতন কিংবা অবচেতন তদ্রায়
কেবলই সে, আর তার মোহ-মায়া।

সকালে সুগন্ধি শোভা, বিকালে রক্তিম আভা
দুপুরের তপ্ত রোদ্দুর, রাতের কৃষ্ণকালো
সহস্র কাল আগে, রাগে-অনুরাগে
কাউকে ভেসেছিলাম ভালো।

নিভৃত প্রেম

আজ হতে শতবর্ষ পরেও লোকে বুঝতে পারবে
উদাস কবির জীবনে কেউ এসেছিল নিভৃতে।
সংসার জীবনের এক যুগ পেরিয়ে যাবার পর হয়ত
গৃহিনীর নিরব আক্ষেপ হয়ে যাবে।
প্রতিরাত তার পাশে শোয়ে থাকা মানুষটি অন্য কারো চিন্তায় নিমগ্ন।
হয়তো কোন একটা তুমিও উপলব্ধি করতে পারবে
এক সময় তোমার পাশে থাকা মানুষটি তোমায় কত ভালবাসত
যখন বোধদয় হবে তখন যে কিছুই বাকী থাকবে না
জীবন এগিয়ে যাবে
সময় থমকে যাবে;
অসংখ্য বিচিত্র দিনের সাথে একটি রাত বারবার ফিরে আসবে
তীব্র প্রেমানুভতি আর না বলা গল্পগুলো নিয়ে।

শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

এবং সে

অনেক খোঁজার পর তার দেখা পেলাম।
যার নাম শুনলেই ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে উঠে।
ডাগর চোখের গভীরতা হৃদয়ে দ্যুতির রশনী জোগায়
যার জন্য কোন মুশকিলে পড়ে গেলেও খারাপ লাগে না।
বরং খানিকটা আনন্দই হয়।
যার সাথে চলা প্রতিটি কদম আরও দু-কদম সামনে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়
লোক-নিন্দা অমৃতের মতো লাগে।
যার সাথে কাটনো মুহুর্তগুলিকে মনে হয়
স্বর্গলোক থেকে ধার করে আনা।
মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরানো দায়,
কেবলই মনে হয়, এই তো আমার স্বর্গ।

তৃষ্ণার্ত কবি

এ জন্মে আমি কবি হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলাম।
ততদিনে কর্পোরেট দুর্ভিক্ষে খেয়ে নিয়েছে পৃথিবীর পুরোটাই;
কবিত্বের তৃষ্ণা নিয়ে পেটের দায়ে কেউ অফিসের পিয়ন কেউ বা বস
কেউ কেউ বা স্বত্বাধিকারী।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখক রূপে কতবার যে সাহিত্যকে ধর্ষণ করে গেল
তার হিসাব না হয় নির্লজ্জভাবে স্তুপচাপা দিয়েই রাখল।
আমার আর কবি হওয়ার সাহস হয়ে উঠল হল না।
নিরবে ঢাকা পরে মৃতপ্রায় কবির আর্তচিৎকার।
তা তে কার কি আসে যায়...
আফসোস; এ জন্মে আমি কবি হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলাম!

শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১

নিঃশব্দ বচন

আমার এই নিস্তব্ধতা ভাঙার ভাষা কোথা পাই?
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বণি কে বুঝিবে হায়!
নিশ্চুপ শব্দগুলি খুঁজে পায়না বচন...
জিতে ছিলাম ঠিকই। তবুও শূন্য ময়ূর সিংহাসন।

ভালবাসা দূরে গিয়ে অভিমান হয়, উপেক্ষা হয় ক্রোধ
হাজার বছর ধরে ধ্রুপদী'রা কাঁদে, জাগ্রত হয়না বোধ।

শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০২১

একটি ঝগড়া এবং অতঃপর

এরকম একটি তারিখই তো ছিল
শুধু বদলে গেছে পাচটি ক্যালেন্ডার।
অধরা স্পর্শের সাথে আমার একবারই ঝগড়া হয়েছিল ;
খুব যে বলার মত ঝগড়া তাও নয়
ছোটখাট মনোমালিন্যের মত একটা ব্যাপার
কিছু মানুষের কাছে অভিমানের পাল্লাটা একটু বেশিই থাকে
বেশি অধিকার খাটাতে গিয়ে হঠাৎই আবিষ্কৃত হয় অনাধিকার চর্চা।
না, এত অধিকার তো আমাকে দেওয়া হয়নি।
না সে কখনো আমার ছিল
না সে কখনো আমার হবে
তবুও তো মনে হয় তার অনিষ্ট আমার অনিষ্ট।
অনাধিকার চর্চাটাও না করতে পরে
মুছে ফেলেছিলাম বন্ধুতালিকা থেকে
রুদ্ধ করে দিয়েছিলাম দ্বার।

সে আজ এক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়
সে কল্পলোকে এসে, মুচকি করে হেসে
বলে, "আপনি জানেননা, আমি না একটা মিচকা শয়তান"।
আমিও সুযোগ পেলেই তার কথা উত্তর দেই;
কেউ যখন বলে, "কেমন চা খাবেন?"
আমিও তো সেই কথাটিই বলি যা তাকে বলতাম
"চিনির সল্পতা, দুধের আধিক্য।"
বিদায়সম্ভাষণে এখনো বলি, টাটা।

শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

থার্ডক্লাশ অডিয়েন্স

আমি এক পেয়ালা চায়ের সন্ধ্যানে হেটে চলেছি সুদীর্ঘ রজনী
পথে একদল ভিখারি অনাহারে চিৎকার করে চলেছে।
বড় বড় পুঁজিবাদী দেশ গুলি তেলের বিনিময়ে খাদ্য না দিয়ে
গ্রেনেড আর AK-47 তুলে দিচ্ছে হাতে।
গ্রেনেডে ক্ষতবিক্ষত তারই মত আরেক ক্ষুদার্ত ভাই।
রক্তের প্লাবনে গভীর সমুদ্র মরুর বুকে।
ঐ দিকে বাজার নষ্ট হবে বলে জাহাজ ভর্তি খাদ্যশষ্য
কান্না করে ডুবে যায় আটলান্টিকের গহীনে।

আমাজন-সুন্দরবন খেয়ে ফেলা জনাবরাও
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে জাতিসংঘের মঞ্চে ভাষণ দেয়
বাহ! বাহ! বলে তালি দিতে থাকে একের পর এক নিউক্লিয়ার পরীক্ষা করা সহোদররা;

পৃথিবীকে শুধু তারাই রক্ষা করতে পারে।
পৃথিবীর বিশাল নাট্যমঞ্চে আমরা তো কেবলই থার্ডক্লাশ অডিয়েন্স।

সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১

আকাঙ্খা

তোমাকে দেখার আকাঙ্খা যে কত তীব্র
তা কেবল এই রাজপথ জানে।
শূন্য প্রান্তরে অবিরাম ছুটে চলা
চোখের কোণে রাখা সহস্র নিশ্চুপ শব্দ,
বেড়িবাঁধ ভেঙে দেওয়ার প্রত্যয়ে
কাটিয়ে দিয়েছে নক্ষত্রসম অব্দ।
যুগান্তরের জলধি পেরিয়ে
ফের আবার ঠায় দাড়িয়ে;
ফিরে দেখি পিছু পানে...
তোমার হৃদয় ছুয়ে যাবার আকাঙ্খা যে কত তীব্র
তা কেবল এই অন্ধ রাত জানে।

শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১

একজন সে

সে এমনি একজন
যাকে আমার সচেতন এড়িয়ে যায়,
কৃষ্ণগহ্বের মত আকর্ষণী ক্ষমতা।
কোন যুক্তিতেই সে আমার নয়,
অথচ, অবচেতন মনের আকাঙ্খা
উপেক্ষা করা দায়!
সে এমনি একজন
যাকে আমার সচেতন এড়িয়ে যায়।

বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

এলোকেশী

এলোকেশী,
গোধূলির রক্তিম আভা উপেক্ষা করে তুমি এলে।
তোমায় প্রথম চেয়েছিলাম শরতের কান্নায়
কুয়াশার চাদরে মোড়ানো কোন এক সকালে
আমার সেই নিঃসঙ্গতার বারুদে সূর্য জ্বলে ছাড়খার মধ্য দুপুরে
প্রাণহীন মরুর উদ্ভব বিষুবীয় প্রান্তরে
একবিন্দু জল করেনি এতটুকু করোনা,
এলোকেশী তখন তো তুমি পাশে ছিলে  না।

শারদীয় বিকালের হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে
চুপসে জবুজবু আমি
পাশের কনক্রিটের স্তম্ভ ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশব্দে হয়ে যায় অস্তিত্বহীন পলি জমি
যেন অবশিষ্ট থাকে না একটিও কণা।
এলোকেশী তখন তো তুমি পাশে ছিলে  না।

সন্ধ্যায় মেঘ কেটে যখন মন সিক্ত
সিধুররাঙা রক্তিম আভায়,
বিষাদ যাতনা সব হারিয়ে
নতুন স্বপ্নের দ্বার গোড়ায়;
অতঃপর তোমি এলে।
হঠাৎই তুমি আঁধার নামিয়ে বর্ণালী সন্ধ্যা কেঁড়ে নিলে।
এলোকেশী,
গোধূলির রক্তিম আভা উপেক্ষা করে তুমি এলে।

সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি

প্রিয়তমা,
তোমি সেই একজন যার জন্য আমি স্বর্গটাকেও উপেক্ষা করতে পারি,
আমার কাছে ভালবাসা মানে
নাটাই ছেঁড়া এক ঘুড়ি।
ঈশানে তার অস্ত ডুবে
পুবে নতুন কুঁড়ি।

সুতার টানে আলো আনে
দ্বিপ শিখা চিরন্তন
তবু অর্ধেক তার দেখি
অর্ধেক থাকে বাকি
আজন্মের প্রহসন।

পূর্ণতার খোঁজে
এক জোনাক বিহীন সাঁঝে
অগ্নিকুণ্ডে আরোহন করি,
তোমি সেই একজন যার জন্য আমি স্বর্গটাকেও উপেক্ষা করতে পারি।

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আমাদের সংসার

এমনিতে আমি বড্ড অলস,
সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারিনা।
আমার ঘুম ভাঙ্গানোর দায়িত্বটুকু তোমাকেই নিতে হবে,
আমি তোমার ভেজা চুলে চিরুনি বিলিয়ে দেব।

এক আধটু রান্নাও করতে পারি,
সকালের নাস্তাটা না দু'জন মিলেই করলাম
টাই বাঁধার কাজটা তোমাকেই করতে হবে।
টাই আমি নিজেই বাঁধতে পারি,
তোমার হাতে স্পর্শটুকু ছাড়া অফিসে মন ঠিকবে না।
বিনিময়ে আমি তোমার শাড়ির কুছিগুলি ঠিক করে দেব।

বেরুনোর আগে যখন দেখব বাবা পত্রিকার পাতায় ডুব মেরেছে
আর মা ব্যাস্ত কিচেনে দুপুরের রেসিপি নিয়ে
অমনি তারাহুরো করে ললাটে চুমো খেয়ে পালাব অফিসের পথে।
মাঝে হয়তো এই সুযোগটা আসতে চাইবে না।
আমি সুযোগের খুজে বেড়ালের মত এ ঘর ও ঘর করব,
সেদিন না হয় একটু দেরীতেই অফিসে গেলাম।
বসের বাকা কথা এ কান থেকে ও কান বের করে দিয়ে
ডেস্কে ডুব দিব।

কাজের চাপে কখন দুপুর হবে বুঝতেই পারবনা
ছুটির দিন ছাড়া হয়তো দুপুরে দু'টেবিলেই বসতে হবে দুজনকে
তবুও মাঝে মাঝে আদিখ্যেতা দেখিয়ে টিফিন হাতে চলে এসে অফিসে
বাসায় ভাল কিছু রান্নার অজুহাত নিয়ে।
বস খুব একটা খুশি না হলেও ভদ্রতা করে হাসবেন
আর বিকালে এসে একটু কড়া স্বরে বলবেন,
"লাঞ্চ তো ভালই করেছ, আর্জেন্ট ফাইল, শেষ করে যেও।"

কখনো কখনো ছুটির দিনে আমরা বেড়িয়ে পড়ব।
হয়বা পরিচিত কোথাও
যেখানে সুযোগ পেলেই তোমাকে নিয়ে আসি
কিংবা অচেনা কোথাও।
যেখানে নীল জলে নিমজ্জিত হয় ভাস্কর
তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে বলবে,
"আমি তোমাকে ভালবাসি।"

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১

দূরে থাক প্রিয়তমা

আমার অতিপ্রিয় জিনিসগুলি বরাবরই অনাদরে অবহেলায় নষ্ট হয়।
ছেলেবেলায় দুইটি নোটবুক ছিল।
অপেক্ষাকৃত কম পছন্দের নোটবুকে লিখে প্রিয় নোটবুকটি সযত্নে রেখে দিয়েছিলাম।
শ'খানেক কবিতা নিয়ে সাধারণ নোটবুকটি স্বগর্বে ঠিকে থাকলেও
ধূলির আস্তরণে অর্ধযুগ পরে থেকে প্রিয় নোটবুকটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেল।

চটলেট আইসক্রিম আমার খুব প্রিয়
ছেলেবেলায় অনেক খেতাম
অতিপ্রিয় হওয়ার পর তুলে রেখে দিয়েছি।
প্রিয় গানটি শোনা হয়না কখনো।

ক্যাম্পাসে সেই মেয়েটির এক লাজুক হাসিতে নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম
অথচ, কোনদিনও সামনে দাঁড়ানোর সাহস করিনি হারিয়ে ফেলার ভয়ে
অথচ, সে কোনদিনই আমার ছিল না।
প্রথম প্রেমের গল্পটা তেমনি চাপা পড়ে গেছে কালের ম্রোতে।

অতিপ্রিয় জিনিসগুলোকে স্বযত্নে আগলে রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।
আর প্রতিনিয়তই সেখানে যোগ হয় নতুন নতুন নাম।
নতুন নতুন আক্ষেপ।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

কেয়া বনের রাণী

মাত্র দুইদিনের পরিচয়।
হঠাৎ করেই পরদেশী বালিকা কেয়া ছোট একটি পারফিউমের কৌটা সামনে ধরিয়ে বলল, এইটার সুগন্ধি আমার খুব প্রিয়। অনেক খুজেও ঠিক এরকম আর একটাও খুঁজে পাইনি। আমি গন্ধ শুঁকে কৌশলে নিজের কাছে রেখে দিলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানাদি শেষ হওয়ায়, পরদিন তারা চলে যাবে। পরদেশী বালিকার যদিও সকালে আমাকে নিয়ে খানিকটা ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ ছিল আমি সেই স্বাদের গুড়ে বালি দিয়ে কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই কেটে পড়লাম।
এরপর দুএকবার যোগাযোগ হলেও কোথায় যেন থমকে যায় কেয়া। আমি বুঝতে পারি, তার সাথে কথোপকথনে কি বলবে খুজে পায়না যেন৷ প্রতিনিয়ত সে নিজেই যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও 'কেমন আছেন' বলেই যেন থেমে যায় সব কথা। আমি কতগুলো মুহুর্ত চুপচাপ থেকে 'বিদায়' বলে নিজেকে রক্ষা করি।
কোন একদিন পারফিউম কিনার প্রসঙ্গ উঠতেই বলি, "কি করে কিনবে? তোমি যেটা পছন্দ কর সেটা তো আমার কাছে।"
সেও যেন কথা বলার একটা টপিক খুজে পেল। সে যেটা বলল সেটা আর সাধারণ কথাবার্তা না বলে থ্রেটও বলা যায়, "যত্ন করে রাখবেন। নইলে কিন্তু হাড্ডি ভেঙে দেব।" আমি বললাম, "যতদিন বেঁচে আছি ততদিন থাকবে।"
ভয়ে বললাম না আর অন্য কোন কারণেই বললাম সেটা জানিনা। জানতে কিংবা জানাতেও চাইনা। শুধু এতটুকুই জানি, কতগুলো গল্প এখানেই থেমে যাওয়া উচিত। যদি আমার নতুন করে কাউকে ভালবাসার ক্ষমতা থাকত তাহলে গল্পটাকে পূর্ণতাদান করতাম। মাঝপথে থমকে যাওয়া নিজের গল্পটার মত এটাকেও মাঝপথে ছেড়ে দিতাম না।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

ফিরে এসো প্রিয়তমা

ফিরে এসো প্রিয়তমা,
তোমার বিরহে এখনো অভ্যস্ত হয়ে যাই নি।
আমাদের সেই সময়টা এখনো হারিয়ে যায় নি।

মনের ভূলে, হলদে ফুলে
এখনো তোমায় খুজি,
শেফালী ঘ্রাণে, ভাবি আপন মনে
এই তোমি এলে বুঝি।

শুভ্র মেঘে, কাশফুল একে
নিযুত কল্প করি জমা,
ফিরে এসো,
তুমি ফিরে এসো প্রিয়তমা।

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১

প্রার্থনা

আকাশের চেয়েও বিশাল হোক তোর ঘুড়ি
রংধনুর চেয়েও বৈচিত্র্যময় হোক রঙ তার
তোর নিঃশ্বাস হোক প্রভাতের মত সতেজ
সালোকসংশ্লেষণের জন্য বৃক্ষের আকাঙ্খার

তুই সুখী 'হ'
এই আমার প্রার্থনা নিরন্তর,
আমার নিশ্চুপ আর্তনাদ মুছে দিক তোর গ্লানি
রাজাধিরাজ থেকে বেশি প্রাচুর্যে পূর্ণ থাকুক অন্তর।

নিহীরিকা পতন

তুমি প্রভাত খোঁজে থাকা শিউলীর আকাঙ্খার মত তীব্র আর সে শরতের মেঘের মত শুভ্র। তুমি এমন এক কৃষ্ণগহ্বর যেখানে ছায়াপথের নিহীরিকাগুলি নতুন কক্ষপথের সন্ধানে ঝাপিয়ে পড়ে। সে কি আর খুঁজে পায় তার কক্ষপথ না'কি সেই বিন্দুতেই থমকে তার সময় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

শ্বেত শিলা

প্রিয়তমা,
তুমি তাজের শ্বেত মর্মর পাথরের মত
যেখানে আমার সুপ্ত আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়।
দূরে থেকে আপন মনে হওয়া কঠিন শিলাকে নিযুত বছরের অশ্রুবিন্দু অযুত বছরের অঝোর শ্রাবণ হয়েও তরলীকৃত করতে পারে নি।

বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২১

তৃপ্ত জাতিস্মর

যতটুকু পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল না আর
সকালে ঘুমভাঙা চোখে তোমার ঝাপসাদৃষ্টি
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে জ্বলে ছাড়খার
সন্ধ্যায় স্রোতহীন বরাকের শাখায় এক কাপ চা।
কিংবা নগরীর অবদ্ধ ঘরে বদ্ধস্বরে চাপা উল্লাসের সমাহার
তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল না আর।

তার বিস্তার কেবল কামনায়, কল্পনায়
না কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারে,
না সে কাউকে স্পর্শ করতে পারে।
হাজার বছর পেরিয়ে জাতিস্মর
হঠাৎই চমকে উঠে...
"তোমি তাহলে এলে,
কত দিন পর দেখা হল বলতে পার?"
এই এক মুহূর্ত দেখার জন্যই যেন জন্মেছি সহস্রবার...
যতটুকু পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল আর।



আমন্ত্রণ

হঠাৎই তার ফোন এল।
-আপনি এখনো প্রিন্ট দিচ্ছেন?
এত সময় লাগছে কেন?
--না, প্রিন্ট দেওয়া শেষ বের হচ্ছি।
-আমরা ফ্রেন্ডস রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিচ্ছি
চলে আসেন।
--আসছি।
-কত সময় লাগবে
--এই ধর মিনিট পনের।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন রেখেই গাড়ি চড়ে বসলাম।
গাড়িতে বসে বসে ভাবলাম,
এতগুলো কাজ হাতে রেখে গাড়িতে উঠার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল...
ভেবে খুব একটা লাভ নেই।
তার ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপ থাকা
সে শক্তি খুইয়ে বসে আছি সেই কবেই।
কি যেন এক ঘোর কাজ করে এখন।
যেদিন তাকে দেখি
আর যেদিন তাকে দেখিনা
দুইটা দিন যেন আলাদা।
যেদিন তাকে দেখিনি
মনে হয় সেদিনটা আমার জীবনে ছিল না।
এটা কি মাত্রাহীন আবেগ
নাকি সংজ্ঞাহীন ভালবাসা?