প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমরা এক সাথে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আপনাকে কিন্তু আমার একটুও পছন্দ না। এক প্রহর কেটে গেল এর মাঝে। প্রথমে ফাস্টফুডের একটা ঘরে চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চফ্রাই, সফট ড্রিংকস নামের কতগুলি আইটেম খাওয়া হল। পুরো শেষ করা যায়নি, এত দামি খাবার নষ্ট করার কোন মানে হয়না। বাকীটা পার্সেল করা হল।
এমনি অমনি তো আর ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একটি মেয়ের সাথে দেখা যায় না, আমাদের দেখা করার বিশেষ একটি কারণ আছে। লেপটপে অটোক্যাড নামক সফটওয়্যারটি নাকি লাইসেন্স নিয়ে জামেলা করছে। যদিও আমি খুঁজে কোন সমস্যা পেলাম না। সে গোল্লায় যাক, প্রতিবার এমনি ছোটখাট কিছু না কিছু একটা বাহানা খুঁজে বের করতে হয় আমাদের। আগেরবার একসাথে কিবোর্ড কিনতে বেরিয়েছিলাম, সেদিন খুব শহরের বাইরে একটা যাব বলে খুব তারাহুরোতে ছিলাম তাই দুই আড়াই ঘন্টার বেশি একসাথে থাকা গেল না। এবার সেরকম কোন তাড়া নেই।
শহরে ফিরার সময়ই তাকে কল করেছিলাম, চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ দিয়ে। ফোনে তখন বলেছিল, দেখা হওয়াটা নিশ্চিত না। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম ও বিকালে দেখা করতে বেরুবে এবং সাড়ে তিনটা বা চারটায় কল দিবে। মাঝখানে আরেকটা সাইট দেখতে চলে যেতে হল শহরের বাইরে।
গহরপুর।
নামটা চেনা চেনা, ভেবেছিলাম কাছেই হয়তো বা। পরে দেখি নগরী থেকে ২৭ কিমি দূরে। এত দূর জানলে যেতাম না। কোন কিছুর বিনিময়েই তার সাথে দেখা করা থেকে বঞ্চিত হতে চাচ্ছিলাম না। মেজাজ খানিকটা বিগড়ে গেলেও চেপে রাখার চেষ্টা করলাম, তারাহুরো করে সাইট ভিজিটিং শেষে যখন রওনার হয়ে খানিকটা এগিয়ে গেছি শহরের পথে তখনই বেজে উঠল ফোন। তাকে চল্লিশ মিনিট পর বের হতে বলে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম। রাস্তাটা বেশ প্রসস্থ, গাড়ির পরিমাণ খুবই কম।
উত্তেজনায়, খুশিতে আমার হৃদয় টলমল করছে তখন। এমন নয় যে, ওর সাথে প্রথম দেখা। এইভাবে অসংখ্যবার আমরা দেখা করেছি; প্রত্যেকবারই সেই উত্তেজনা, সেই আনন্দ। আমি ইচ্ছে করে একটু আগেই বেরিয়ে যাই, যেন ওর কখনো অপেক্ষা করতে না হয় আর তার জন্য অপেক্ষা করতে যে কি ভালো লাগে সেটাই বা কি করে বুঝাই।
ফাস্টফুট খেয়ে আমরা আরও খানিকটা সময় বসলাম; যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে থাকে খাওয়া শেষে এরা বেরুচ্ছে না কেন! ভদ্রস্থ সময়টুকু কাটিয়ে আমরা নেমে এলাম রাস্তায়। প্রায় দুশো মিটার দূরে একটা চায়ের দোকান। মেয়েটির দৃষ্টিতে আমি ভাল একজন সিনিয়র ভাই কিন্তু আমি এই সম্পর্কটিকে ভাল একটা বন্ধুত্ব বলতেই পছন্দ করি। মেয়েটি জানে আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি তাকে বলেছি আমার ভালবাসাটাকে উপেক্ষা করতে, কোন কারণেই আমার এই বন্ধুটিকে হারাতে চাই না আমি। সে এমন একজন যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে উপস্থাপন করতে পারি, আমার ভাল খারাপ অনুভূতি, সূক্ষ্ম থেকে খুশি, অপমান যা আর কাউকে এত নিঃসংকোচে বলতে পারিনা। না জানি কত নারী জীবনে এসেছে বা আসবে কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তার মতো কেউ হবেনা।
ক্বিন ব্রিজের নিচে এক কাপ খেতে বসে এক জায়গায় কেউ আমার সাথে বিরক্তিহীনভাবে ছয় সাত ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবে না। মনে কাছে একদিন দশঘন্টা এক সাথে গল্প করার পরও খানিকটা আফসোস নিয়ে শেষ হয়েছিল সেদিনের আড্ডা। শহরের প্রতিটি রাজপথ আমাদের চিনে। কাঁধে ব্যাগ আর খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলছে দু'জন মানুষ।
প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমরা এক সাথে ঘুরার এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আপনাকে কিন্তু আমার একটুও পছন্দ না। আমি বললাম, এমন মানুষের সন্ধানই আমি করছিলাম। শক্ত, প্রস্থরখন্ডের মত শক্ত হবে তার হৃদয়। আমি পাগলের মতো তাকে ভালোবাসবো আর সে এতটুকুও গলবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন