কি অদ্ভুত খাপছাড়া একটা স্বপ্ন। প্রথমে একটা নগ্ন নারীমূর্তির সাথে ইচ্ছেমত ঝগড়া হল। ধ্রুব বোধহয় তাকে চিনে; সেই প্রাক্তন যার বিয়েতে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিল। এই সকল অতীত মানুষকে পরবর্তীতে লজ্জাকর বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিলেও ধ্রুবর কোন লজ্জা হয়না। সে গর্ববোধ করে এই ভেবে যে সে কাউকে হৃদয় উজাড় করে ভালবাসতে পেরেছিল। সেই সব এখন হারিয়ে যাওয়া গল্প।
স্বপ্নটা হঠাৎই অন্য দিকে মোড় নিয়ে রাস্তায় একটা চলতে থাকা গাড়িতে চলে এল। ধ্রুব এখন গাড়িতে। খুব দামী কার নয় কিন্তু গাড়ির উপরিভাগ খোলা। চার সিটের গাড়িতে সে পেছনে বসা আর তার কাঁধে মাথা রেখে একজন তরুণী। বাতাসের ঝাঁপটা চুল পুরোটা মুখ ঢেকে দিলেও ধ্রুব জানে বালিকাটির প্রশস্ত ললাটের নিচে যুগলবন্দী ভ্রু। বাঁশির মত নাকের উপরিভাগে ডাগর আঁখি, নিচে পাতলা ঠোঁটের উপর প্রায় অদৃশ্য সৌন্দর্যবর্ধক সোনালী পশম। গলায় মধ্যরেখা একটু ডানে খানিকটা নিচের দিকে একটা তিল। দেখা না গেলেও কত পরিচিত একটা অবয়ব, যেন জন্ম জন্মান্তরের স্মৃতি দিয়ে তৈরী করা। রূপসা। রূপসা নামের মানেটা জানে না ধ্রুব, তার কাছে রূপসা মানে রূপের সাগর।
কোন এক অজানা কারণে
রূপসার চোখে পানি।
রূপসা শক্ত করে ধ্রুবর
হাত ধরে আছে।
আস্তে করে ভাঙা গলায়
বলল, তুমি যে আমাকে
পছন্দ করতে সেটা সাবাই
বুঝতে পারল, অথচ...
বেশি কান্নায় রূপসার কথাগুলি খুব
স্পষ্ট নয়, ধ্রুবর প্রচন্ড
কষ্ট হচ্ছে রূপসা চোখে
পানি দেখে।ধ্রুব বলল, চুপ কর।
চুপ কর।
ধ্রুবর হাতে রূপসার হাত,
বুকে মাথা, ভালবাসার জলে
অশ্রুসজল চোখ, ভেজা টিশার্ট। এর চেয়ে আর বেশি আর কিছু চায়না। তবুও কি
যেন একটা কষ্ট হৃদপিণ্ডের
ওজন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
ঘুম ভেঙে গেল ধ্রুবর, ঊষার আভা পৃথিবী আলোকিত করে তুলছে একটু একটু করে। দূরে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে, হারিয়ে যাচ্ছে আরও গহীনে। একটু একটু করে বাড়ছে পাখিদের কলরব। ভেজা চোখে হাত দিয়ে বর্ণহীন তরলের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব। ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। ছোট একটা হাসি ফুটল ঠোঁটের কোণে। "চোখে পানি, ঠোঁটের কোনে এক চিমটি হাসি" 'আমি তপু'র সেই প্রিয়াঙ্কা যেন ফিরে আসে রূপসা হয়ে। এরচেয়ে আর বেশি আর কিছু চায়না ধ্রুব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন