শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

উপেক্ষা

প্রিয়তমার ছোট ছোট উপেক্ষাগুলি
একটু একটু করে মেরে ফেলে।
  
খুবই সূক্ষ্ম সে উপেক্ষা।
আজ হয়ত সে কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে
আমার দিকে আগের দিনের মত নিয়ে তাকাল না,
কিংবা হয়তো কথা বলছে আগের মতই
কিন্তু বাক্যের মাঝে আসক্তিটা নেই
সেই আসক্তির অভাব
...বেচে থাকার অভাব কমিয়ে দেয় অনেকখানি
তার সামাজিক হাসিতে পৃথিবী করে দেয় গোলমেলে
আর একটু একটু করে মেরে ফেলে।

সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১

আকাঙ্খা

আমার সুপ্ত আকাঙ্খাজুরে তোমাকে চাই
খুব গভীরভাবেই চাই।

তোমার ফেলে দেয়া বাদামের খোসা
স্প্রিং ছুটে যাওয়া চুলের ক্লিপ
চিরুনীতে লেগে থাকা চুল
কেটে ফেলে দেওয়া নখ থেকে শুরু করে
অন্তিম লগ্নে ICU'তে খোলে ফেলা নল পর্যন্ত
একটা মুহুর্তও হারাতে চাই না।

দেয়াল

হঠাৎ মনে হয়
এ যেন সবই এক ভ্রম
ক্ষণিকের করা ভূল,
নেহাতই বেখেয়ালে…
  
আমি নিজের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে
বারবার আছড়ে পড়ি
তার আবেগহীন দেয়ালে।

শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

শুভ্র ছায়া

 তোমার চেনা শহর থেকে যদি

      হঠাৎ হারিয়ে যাই শুভ্র ছায়ার বেশে?

অচেনা নগরে, পথে ঘুরে ঘুরে,

                     তুমিও যাবে কি সে দেশে?

বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

পেশা ও ধর্ম

বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম নিয়ে যতটা মুখচর্চা করে আসলে কিন্তু ততটা ধার্মিক নয়। বেশির মানুষ ধর্মকে একটা হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিকভাবে বা সমাজিকভাবে ধর্ম যতটা কার্যকর ঠিক ততটাই অকার্যকর পেশাজীবীদের প্রেক্ষাপটে। সে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী যে পেশাতেই থাকুক না কেন। অধিক মুনাফা পেতে যে কোন হাল পর্যন্ত যেতে পারে।
  
বিভিন্ন মাহফিলে লেকচার দানকারি আলেমদের-ওলামারাও কিন্তু এর বাইরে নয়। এক ঘন্টায় এদের পারিশ্রমিকটা একবার দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর এক মাসের বেতনের কাছাকাছি হবে। অজপাড়াগাঁয়ে মক্তবের হুজুরদের এত সুযোগ নেই তারা ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজ দিয়ে আলগা ইনকাম করে নেন। তবে বেশিরভাগ গ্রামের হুজুরের মাসিক যে বেতন পান তা শুনলে আপনার আমার মত সাধু শ্রেণী মাথানত করে চুপ-চুপকে সটকে পড়ব।
  
একদিন পরিবহন ধর্মঘট হলেই রিক্সাওলার মত ছোট ছোট পরিবহনকর্মীদের ঈদ এসে যায়।
"ব্যবসায় সত্য কথা বলতে নেই" এই ধরনের প্রবাদই প্রচলিত আছে তাদের মহলে। ব্যাবসার কাজে অনর্গল মিথ্যা বলতে একটুও দ্বিধা হয়না মধ্যপ্রাচ্যের লেবাসে থাকা সমাজের সম্মানিত হাজী ভাইটির। কৃষক থেকে কিনা দশটাকার ধান পঞ্চাশ টাকা কেজি হয়ে যে চাল বাজরে আসে সে চালের দিকে তাকিয়ে থাকে খোদ কৃষকই। তার মানে এই না যে কৃষক তার ফল মিষ্টি করার জন্য রাসায়নিক ক্যামিকেল ব্যবহার করবে না আর আপনি বাজার থেকে ফরমালিন মুক্ত মাছ নিয়ে আসবেন।
  
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী তো আছেই, সেখানে পিওনের পর্যন্ত আলগা ইনকাম থাকে। টেবিলের তলায় বা চৌরাস্তার ট্রাফিক সিগনালে কোথায় নেই?
  
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি দেখলে কখনো মনে হয় না এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ছাত্রদের টিউশন ফি টাকা দিয়ে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে বেড়ান ফ্যাকাল্টি সদস্যরা।
  
সরকারি মেডিকেল সার্ভিসকে পুঙ্গ বানিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে চলছে রমরমা ব্যবসা। সাতশ টাকা একজন রোগীর ভিজিট যেখানে দেশের ৫২.৯% মানুষের ইনকাম ১০৭ টাকা বা তা নিচে *(বিশ্বব্যাংক ২০১৬)। এইখানে বেশি কিছু বলা যাবে না, টাকা নাই এখানে কেন আসছেন? সরকারি হাসপাতালে যান।
  
ধর্ম এখানে এসে আটকে যায়। আমরা ধার্মিক ঘরে, ধার্মিক সমাজে কিন্তু আমাদের পেশাগত জীবনে ধর্ম কিংবা ন্যায় বিচারক অজ্ঞান হয়ে যায় কারণ This is business.

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

চুপচাপ গল্প

সবুজ ঘেরা ঘাস
আমার আহুতি দীর্ঘশ্বাস;
তার নিচে চুপিচুপি কত গল্প।
  
পিঁপড়েরা বাঁধে বাসা
ঝগড়া আর ভালবাসা
আমিও যে চাই অল্প।

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

শেফালীর ডাক

অসংখ্য ফুলের প্রেমে পড়েছি।
 
গোলাপের মত রাজকীয়
রজনীগন্ধার মত কামনীয়
কিংবা কলমিফুলের সরল শংকা;
 
অথচ,
সব ছাপিয়ে মনে গেঁথে থাকে
কখনো আমার না হওয়া
শিউলি তরে, তীব্র আকাঙ্খা।

বাঁ পায়ের শিল্পী

অতঃপর প্যারিসের বুকে পড়ল তার পদচিহ্ন।
  
ফরাসি বিপ্লবের কয়েক শতাব্দী পর
আরও একবার জনতা নেমে এল রাজপথে,
ছবি আর কবিতার দেশে
নতুন আরেক শিল্পের আকাঙ্খায়।
  
হে বাঁ পায়ের শিল্পী,
ভালবাসার শহরে তোমাকে স্বাগতম।

প্রিয় নদী রূপসা

প্রিয় নদী রূপসা,
  
বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ
অরণ্য হারানো জোছনা
কিংবা প্রান্তরের সবুজ ধ্বনি;
  
এদের কেউ আমার মত করে
তোমাকে চাইতে পারে নি।

রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

আফ্রোদিতি

অনেককাল আগে আমি একটা ঘুড়ি হয়ে উড়ছিলাম

মৃদু হাওয়ায় নাটাইটানে ভালই চলছিল সব।


কিন্তু সময়ের সাথে আমার অতৃপ্ত আকাঙ্খাগুলি জাগ দিতে থাকে।

তখন উপলব্ধি হয়,

নাটাইসুতার পরিধি আমার জন্য পর্যাপ্ত নয়।


জিউসের ইশারায় একটা আচমকা ঝড়ে

সুতা ছিঁড়ে ঘুড়ি মুক্ত হয়ে গেল

আমি ছুটে চললাম দিগন্ত থেকে দিগন্তে।


অবশেষে যখন নিচে আছড়ে পড়ার কথা

তখন ঘুঘু পাখির বাহনে

গোলাপ নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল একজন।

তার শরীর যৌবনময় রূপ

চোখের গভীরতায় কামনা

আর হৃদয়ে প্রেমের মোহনা।


২. (কথোপকথন)

-  কে তোমি?

=  আফ্রোদিতি

সেই আফ্রোদিতি...

যার জন্মের সাথে জলের গভীর সম্পর্ক।

আমি বিড়বিড় করে বললাম,

-  আফ্রোদিতিআফ্রোদিতিআফ্রোদিতি।


-  প্রিয়তমা তুমি কি আমার?

একটা কঠিন হাসি দিল সে।

হাসির মাঝেও এত কাঠিন্য থাকতে পারে জানা ছিল না।

=   হ্যাঁনা আবার হ্যাঁ

-   এটা আবার কি রকম?

=  এই মুহূর্তে আমি তোমার

  কিন্তু এই প্রিয়মিলন কেবলই ক্ষণিকের

  তোমার হৃদয়ে আমার প্রেম অন্তহীন।


-    চুপ কর আফ্রোদিতি,

  তুমি জীবিতই আমাকে সমাধী দিলে।

  আজ থেকে আরিস থাকবে রণক্ষেত্রে

  তোমারমত হাজারও প্রেয়সীকে নিঃসঙ্গ করে দিবে।

  আর পাষণ্ডহৃদয়ে প্রগাঢ় বিরহী প্রেম নিয়ে

  একটি নামই জপ করবে অনন্ত দিবাতিথি

  আফ্রোদিতিআফ্রোদিতিআফ্রোদিতি।

  

 

 

 


প্লট ও প্রেক্ষাপটঃ

প্রাচীন  গ্রিক পুরাণ অনুসারে দ্বাদশ অলিম্পিয়ান হলেন সর্ব দেবতার মন্দিরে অধিষ্টিত বারোজন প্রধান দেবদেবী।কেন্দ্রীয় চরিত্র জিউসমূল চরিত্র আরেসতার প্রেয়সী আফ্রোদিতি,আফ্রোদিতির স্বামী হেফেসটাস (সম্পূর্ণভাবে উহ্যএই চারজনকে নিয়ে কবিতার প্রেক্ষাপট। মূলত আরেস  আফ্রোদিতির অপূর্ণ প্রেম কবিতার বিষয়বস্তু। পুরাণ এর চরিত্র  ঘটনার সারমর্ম নিয়ে কবিতার উপাখ্যানটি নিজের মত করে বর্ণনা করা হয়েছে।
----লেখক।