বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২১

দূরে থাক প্রিয়তমা

আমার অতিপ্রিয় জিনিসগুলি বরাবরই অনাদরে অবহেলায় নষ্ট হয়।
ছেলেবেলায় দুইটি নোটবুক ছিল।
অপেক্ষাকৃত কম পছন্দের নোটবুকে লিখে প্রিয় নোটবুকটি সযত্নে রেখে দিয়েছিলাম।
শ'খানেক কবিতা নিয়ে সাধারণ নোটবুকটি স্বগর্বে ঠিকে থাকলেও
ধূলির আস্তরণে অর্ধযুগ পরে থেকে প্রিয় নোটবুকটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেল।

চটলেট আইসক্রিম আমার খুব প্রিয়
ছেলেবেলায় অনেক খেতাম
অতিপ্রিয় হওয়ার পর তুলে রেখে দিয়েছি।
প্রিয় গানটি শোনা হয়না কখনো।

ক্যাম্পাসে সেই মেয়েটির এক লাজুক হাসিতে নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম
অথচ, কোনদিনও সামনে দাঁড়ানোর সাহস করিনি হারিয়ে ফেলার ভয়ে
অথচ, সে কোনদিনই আমার ছিল না।
প্রথম প্রেমের গল্পটা তেমনি চাপা পড়ে গেছে কালের ম্রোতে।

অতিপ্রিয় জিনিসগুলোকে স্বযত্নে আগলে রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলা অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।
আর প্রতিনিয়তই সেখানে যোগ হয় নতুন নতুন নাম।
নতুন নতুন আক্ষেপ।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

কেয়া বনের রাণী

মাত্র দুইদিনের পরিচয়।
হঠাৎ করেই পরদেশী বালিকা কেয়া ছোট একটি পারফিউমের কৌটা সামনে ধরিয়ে বলল, এইটার সুগন্ধি আমার খুব প্রিয়। অনেক খুজেও ঠিক এরকম আর একটাও খুঁজে পাইনি। আমি গন্ধ শুঁকে কৌশলে নিজের কাছে রেখে দিলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানাদি শেষ হওয়ায়, পরদিন তারা চলে যাবে। পরদেশী বালিকার যদিও সকালে আমাকে নিয়ে খানিকটা ঘুরে বেড়ানোর স্বাদ ছিল আমি সেই স্বাদের গুড়ে বালি দিয়ে কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই কেটে পড়লাম।
এরপর দুএকবার যোগাযোগ হলেও কোথায় যেন থমকে যায় কেয়া। আমি বুঝতে পারি, তার সাথে কথোপকথনে কি বলবে খুজে পায়না যেন৷ প্রতিনিয়ত সে নিজেই যোগাযোগ রক্ষা করে চললেও 'কেমন আছেন' বলেই যেন থেমে যায় সব কথা। আমি কতগুলো মুহুর্ত চুপচাপ থেকে 'বিদায়' বলে নিজেকে রক্ষা করি।
কোন একদিন পারফিউম কিনার প্রসঙ্গ উঠতেই বলি, "কি করে কিনবে? তোমি যেটা পছন্দ কর সেটা তো আমার কাছে।"
সেও যেন কথা বলার একটা টপিক খুজে পেল। সে যেটা বলল সেটা আর সাধারণ কথাবার্তা না বলে থ্রেটও বলা যায়, "যত্ন করে রাখবেন। নইলে কিন্তু হাড্ডি ভেঙে দেব।" আমি বললাম, "যতদিন বেঁচে আছি ততদিন থাকবে।"
ভয়ে বললাম না আর অন্য কোন কারণেই বললাম সেটা জানিনা। জানতে কিংবা জানাতেও চাইনা। শুধু এতটুকুই জানি, কতগুলো গল্প এখানেই থেমে যাওয়া উচিত। যদি আমার নতুন করে কাউকে ভালবাসার ক্ষমতা থাকত তাহলে গল্পটাকে পূর্ণতাদান করতাম। মাঝপথে থমকে যাওয়া নিজের গল্পটার মত এটাকেও মাঝপথে ছেড়ে দিতাম না।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

ফিরে এসো প্রিয়তমা

ফিরে এসো প্রিয়তমা,
তোমার বিরহে এখনো অভ্যস্ত হয়ে যাই নি।
আমাদের সেই সময়টা এখনো হারিয়ে যায় নি।

মনের ভূলে, হলদে ফুলে
এখনো তোমায় খুজি,
শেফালী ঘ্রাণে, ভাবি আপন মনে
এই তোমি এলে বুঝি।

শুভ্র মেঘে, কাশফুল একে
নিযুত কল্প করি জমা,
ফিরে এসো,
তুমি ফিরে এসো প্রিয়তমা।

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১

প্রার্থনা

আকাশের চেয়েও বিশাল হোক তোর ঘুড়ি
রংধনুর চেয়েও বৈচিত্র্যময় হোক রঙ তার
তোর নিঃশ্বাস হোক প্রভাতের মত সতেজ
সালোকসংশ্লেষণের জন্য বৃক্ষের আকাঙ্খার

তুই সুখী 'হ'
এই আমার প্রার্থনা নিরন্তর,
আমার নিশ্চুপ আর্তনাদ মুছে দিক তোর গ্লানি
রাজাধিরাজ থেকে বেশি প্রাচুর্যে পূর্ণ থাকুক অন্তর।

নিহীরিকা পতন

তুমি প্রভাত খোঁজে থাকা শিউলীর আকাঙ্খার মত তীব্র আর সে শরতের মেঘের মত শুভ্র। তুমি এমন এক কৃষ্ণগহ্বর যেখানে ছায়াপথের নিহীরিকাগুলি নতুন কক্ষপথের সন্ধানে ঝাপিয়ে পড়ে। সে কি আর খুঁজে পায় তার কক্ষপথ না'কি সেই বিন্দুতেই থমকে তার সময় অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

শ্বেত শিলা

প্রিয়তমা,
তুমি তাজের শ্বেত মর্মর পাথরের মত
যেখানে আমার সুপ্ত আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়।
দূরে থেকে আপন মনে হওয়া কঠিন শিলাকে নিযুত বছরের অশ্রুবিন্দু অযুত বছরের অঝোর শ্রাবণ হয়েও তরলীকৃত করতে পারে নি।

বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২১

তৃপ্ত জাতিস্মর

যতটুকু পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল না আর
সকালে ঘুমভাঙা চোখে তোমার ঝাপসাদৃষ্টি
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে জ্বলে ছাড়খার
সন্ধ্যায় স্রোতহীন বরাকের শাখায় এক কাপ চা।
কিংবা নগরীর অবদ্ধ ঘরে বদ্ধস্বরে চাপা উল্লাসের সমাহার
তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল না আর।

তার বিস্তার কেবল কামনায়, কল্পনায়
না কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারে,
না সে কাউকে স্পর্শ করতে পারে।
হাজার বছর পেরিয়ে জাতিস্মর
হঠাৎই চমকে উঠে...
"তোমি তাহলে এলে,
কত দিন পর দেখা হল বলতে পার?"
এই এক মুহূর্ত দেখার জন্যই যেন জন্মেছি সহস্রবার...
যতটুকু পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি চাওয়ার ছিল আর।



আমন্ত্রণ

হঠাৎই তার ফোন এল।
-আপনি এখনো প্রিন্ট দিচ্ছেন?
এত সময় লাগছে কেন?
--না, প্রিন্ট দেওয়া শেষ বের হচ্ছি।
-আমরা ফ্রেন্ডস রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিচ্ছি
চলে আসেন।
--আসছি।
-কত সময় লাগবে
--এই ধর মিনিট পনের।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন রেখেই গাড়ি চড়ে বসলাম।
গাড়িতে বসে বসে ভাবলাম,
এতগুলো কাজ হাতে রেখে গাড়িতে উঠার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল...
ভেবে খুব একটা লাভ নেই।
তার ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপ থাকা
সে শক্তি খুইয়ে বসে আছি সেই কবেই।
কি যেন এক ঘোর কাজ করে এখন।
যেদিন তাকে দেখি
আর যেদিন তাকে দেখিনা
দুইটা দিন যেন আলাদা।
যেদিন তাকে দেখিনি
মনে হয় সেদিনটা আমার জীবনে ছিল না।
এটা কি মাত্রাহীন আবেগ
নাকি সংজ্ঞাহীন ভালবাসা?