মিলি,
দীর্ঘ তের বছর পর তোমার নামে পত্র লিখছি। যেদিন শেষবারের মত তোমাকে দেখেছিলাম, তারও দুই বছর পর যখন অনুধাবন করতে পেরেছিলাম মিলি নামের সেই চঞ্চল বালিকাটিই আমার প্রথম প্রেম তখনই লিখা প্রথম পত্রের পর আজ দ্বিতীয় বারের মত পত্র লেখার ভূত মাথায় কেন চেপে বসল জানিনা। কোথায় আছ, কেমন আছ জানিনা; আর কিছুই জানিনা বলেই বাকী সবকিছু চেপে যাই।
এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়ে তোমার সামনে দাড়ানোর একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম মনে মনে। পৃথিবী ব্যাস্ততা আমাকে গ্রাস করে ফেলল কেমন করে যেন। অনর্থক পৃথিবীতে নিজের আবেগের মূল্য কি করে নিরর্থক হয়ে গেল, তার ব্যাখ্যা আমি হয়ত দিতে পারব না। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকার সংখ্যাটা এক যুগ অতিক্রম করে পনেরতে পা দিল। তবু্ও দেখা হলনা।
দৈবক্রমে অন্য কোন তরুণীর মাঝে তোমার সেই মায়াবী হাসি, চঞ্চলতা, পাতলা ঠোঁট বা গলার নিচে এক চিমটি তিল খুজে পেলে যেন উন্মাদ বনে যাই। কলমি, শিউলী, অধরা স্পর্শ, কিংবা কৃষ্ণসাগর এইসব যেন একই অস্তিত্বের ভিন্ন রূপাংশের ভিন্ন নাম। "এই তো সে, তাকেই তো আমি খুঁজছি।" ভ্রান্তিবিলাসে কতবার সে ভূল করেছি, সেই হিসাব স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ মিলাতে পারবে কি না জানিনা। ক্ষণিকের মোহে যে তাসের ঘর বাধি, বেলা শেষে সে খেলা ঘর ভাঙা ছাড়া আর কোন উপায় বাকী থাকেনা। হৃদয় দ্বারে অনাগত তরুণীরও বুঝতে পারেনা যে মিলি নামের সেই বালিকাটিকে খুঁজে পেতেই হৃদয় উন্মুক্ত করে প্রতীক্ষা করছিলাম, তারা ভূল করে এসে পড়েছে।
মাঝে মাঝে জাগতিক সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার স্বাদ জাগে। স্বপ্নের ঘোরে কয়েক কদম সম্মুখপানে এগুতেই দেখি, শেকড় ছিঁড়ে যাবার উপক্রম... দৌড়ে এসে হাল ধরি। তোমাকে আর সেভাবে খুঁজা হয়না। পনের বছর আগের সেই প্রথম প্রেমকে হৃদয়কুঠিরে অযন্তে অবহেলায় লালন করে আসছি। সত্যি বলতে মিলি, তোমার শূণ্যতা কখনোই সেভাবে উপলব্ধি করিনি। কেন জানি মনে সব সময় তোমি আমার পাশেই আছ। চোখের পাতা এক করলেই তোমার অনাবিল সৌন্দর্যরূপ প্রতীয়মান হয়। তোমাকে ভালবাসতে পদার্থবিঞ্জানের সূত্রে রক্তে-মাংসের কোন দৈহিক অস্তিত্বের প্রয়োজন বোধ করিনি এক মুহুর্তের জন্যও।
চাইলেই হয়ত খুঁজে বের যায়। তবু্ও খুঁজিনা। কেন জান? ভয় হয়। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। দীর্ঘ এই সময় নিশ্চয় তোমাকেও বদলে ফেলেছে অনেকখানি। আমি যে মিলিকে ভালবাসি সেই মিলি কি এখনো দু হাত ছড়িয়ে ভোঁ দৌড় দেয়? গনিতের কোন ধাঁধায় ফেসে গেলে কপাল না কুঁচকে আগের মত মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়? সেই আগের তোমাকে না পাওয়ার ভয়টাই সবচেয়ে বেশি। তাই নিরবে নিভৃতে মিল্কিওয়ের থেকেও প্রশস্ত হৃদয়ে ভালবেসে যাই তোমাকে।
ইতি
প্রাইমারির কোচিংয়ে তোমার পাশে বসা ছোট ছেলেটি
অঙ্কে ফেসে যার দিকে ছোট্ট একটা দিলেই সমাধান বেরিয়ে আসত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন