শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

স্মৃতিচারণ

এক কালের দেখা সেরা সুন্দরীটির চামড়ার খাজে অজস্র রেখা
কত কি নতুন প্রকৌশল চোখ তুলেছে কপালে
বয়সের ভারে এখন আর তেমন কিছুই মনে থাকে না
এক দুই তিন চার করে জীবন কাটিয়ে দিয়েছি তিন কুঁড়ি,
নাতিপুতিরা সামনে এসে বলে, বলতো দাদু আমার নাম কি?
আমি বিষম খেয়ে যাই।
মাঝে মাঝে দুএকবার ভূল করলে সে কি আনন্দ তাদের!
দূরের আত্মীয়রা কেউ কেউ আহত হয়, নিরবে অভিমানও করে।
"আমায় চিনতে পারছনা, জেঠোমশাই?
আমি অমল কান্তির ছেলে নকুল।
ঐ যে একবার বিলের মস্ত বোয়ালমাছ পাঠিয়ে
আপনাদের চোখ ছানাবড়া করে দিয়েছিল।"
অমল কে আমি ঠিক চিনে উঠতে পারিনা।
পাঁচ যুগের গল্পের কি আর শেষ আছে
কত কিছুই তো দেখলাম জীবনে
তবুও খুশি করার জন্য বলি, "বসো বাবা,
তোমার বাবা কেমন আছে,
কি করা হচ্ছে আজকাল?"
এক ধরনের সূক্ষ অভিনয়।
  
সব কি ভূলে গেছি
কিংবা সব মানুষ? 
না, সে কি করে সম্ভব?
সবকিছু চাইলেই ভূলা যায়না।
জীবনের কতকবার বেশ খুশী হয়েছিলাম।
স্বর্গলাভ করব কি না জানিনা
কিন্তু স্বর্গের সুখ পেয়েছি অনেকবার
যতবার প্রেমে পড়েছি ততবার।
একেবারেই ছেলেবেলার ভাললাগার মানুষটি
যখন ষোড়শীর বালিকা হয়ে প্রশ্ন করেছিল, ভালবাসেন?
কি বিব্রতকর পরিস্থিতিতেই না পড়েছিলাম।
তবুও কি যেন একটা ভাললাগা
কি করে ভূলি?
  
কিংবা কোন অচেনা বালিকার চঞ্চলতা দেখে
প্রথম পলকেই প্রেমে পড়ার অনুভূতি...
না, সেই বালিকার সাথে দ্বিতীয়বার আমার দেখা হয়নি
কিন্তু ঔ একটি মুহুর্ত আমি আজীবন বেধে রেখেছি।
আজও তাকে মনে পড়লে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে।
আমি বুড়িগঙ্গার মত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি
অথচ সে এখনো বালিকারূপেই হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
  
তারপরও যখন কিশোর বয়সে পা রাখলাম
সমবয়সী দুঃসম্পর্কের বোনকে নিয়ে
চুরি করে ঘুরতে যাওয়া
কিংবা রাতে চুরি করে কৃষকের ফসলে ভাগ বসানো
থরথর পরশে চুম্বন খেয়ে স্তব্ধ বনে যাওয়া
সে সব ভূলা কি এতই সহজ?
  
তারপর আরও অসংখ্যবার
পেয়েছি স্বর্গীয় অনুভূতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে দেখে থ বনে যাওয়া
বছরের পর বছর শুধু দূর থেকেই দেখে যাওয়া
কিংবা বুকে অদম্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোন অষ্টাদশীকে বলা
"বিয়ে করবে আমায়?"
  
আজকাল যা ঘটে কিছুই মনে রাখতে পারিনা
তবে সেই সব স্মৃতিগুলি আগলে রেখছি সযত্নে।
শেষবার কবে খুশী হয়েছিলাম?
যখন চল্লিশবছর সংসার করে সহধর্মিণী পৃথিবী ত্যাগ করেছিল।
সে ত্যাগে আমি পেয়েছিলাম মুক্তির স্বাদ।
বড্ড বেশি আঁকড়ে ধরেছিল আমাকে
আমার সুখস্মৃতিতে তার গল্পটাও ছোট নয়
তবুও কেন জানি মনে হল হাফ ছেড়ে বাচলাম
পৃথিবীতে যতদিন আছি, অবহেলায় পড়ে থাকা স্মৃতিগুলি আবার জেগে উঠবে।
জাগিয়ে দিবে আমাকে নতুন করে
আমি কখনো কিশোর হব
কখনো চলে যাব তারুণ্যের দিনগুলিতে
সেই দিনগুলোই তো আমার স্বর্গ।
  
 
#স্মৃতিচারণ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন