বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

উপসংহার (ঝরাপাতা)

একদিন হঠাৎ করে তুলি সিদ্ধান্ত নিল সে আর এই ইউনিভার্সিটিতে আসবে না। অম্লান, সায়েম আর মিষ্টির মত সেও স্থাপত্যবিদ্যা থেকে অবসরগ্রহণ করল। বেশ কয়েকটি কারণে স্থাপত্য বিভাগ ওর কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। আমি নিজেও কয়েকবার খেয়াল করে দেখেছি ওর যে কতগুলি দূর্বল জায়গা ছিল সেগুলি নিয়ে ইনডাইরেক্টলি খোঁচা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে এ আচরন মেনে নিতে পারেনি ও। আমাদের সবার সাথে বন্ধন ছিন্ন করে হারিয়ে গেল। সেও বছরখানিক আগের কথা। তারপর আর কখনোই ওর যোগাযোগ হয়নি। আমি নিজেও যোগাযোগের কোন চেষ্টা করে দেখিনি কোনদিন।

মনেপড়ে, তুলি যখন ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কতগুলি সমস্যা কাটিয়ে সবকিছু প্রায় ঠিক হয়ে যাবার পর আমাকে একদিন বলেছিল, "দোস্ত, কাল আমরা বিয়ে করছি।"
শুনে আমি একটু সময় চুপ থেকে বলেছিলাম, "তোকে হয়ত বিয়ে করতে হবে নয়তো বা আর্কিটেকচার নিয়ে থাকতে হবে। দুটো একসাথে সম্ভব না। আর তুই যদি সত্যিই বিয়ে করিস তাহলে তবে বিয়েতে উপহারসরূপ আমি তোকে মেহেদী গিফট করতে চাই।"

কাজী অফিস গেলেও শেষ পর্যন্ত তার বিয়েটা করা হয়নি। হয়ত বা স্থাপত্যের প্রতি অনেক মমত্ববোধের জন্যই। বিয়ে বিষয়ক সংলাপ শেষ করে একসাথে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে বসার পর সে ছুটতে লাগল পূর্বদিকে, আর আমি হাটতে লাগলাম পশ্চিমে।
দুজনের ভিন্ন দুটি দিক, ভিন্ন দুটি বাহন, ভিন্ন দুটি গতি তবুও মিশে গিয়েছিলাম কোন একটি বিন্দুতে।

গল্পঃ #ঝরাপাতা
বি.দ্র. মূল গল্পটা একটু বেশিই বড় ছিল। পুরোটা টাইপ করার সাহসও করে উঠতে পারিনি। পরে চিন্তুা করে দেখিছি, ভাল একটি উপসংহারই পুরো গল্পের প্রতিচ্ছবি হতে পারে। জানিনা কেমন হয়েছে।

সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

তুলি

তুলির ছবিতে আকা,
চোখ তার মেঘে ঢাকা,
মুখখানি মায়ামাখা....
প্রভাত বেলা।
বিদিশার আধার কাল,
কেশগুলি এলোমেলো,
বাতাসেতে চন-চল....
করিছে খেলা।
মুক্তা ঝড়ানো হাসি,
ঝড়ে পরে রাশি রাশি,
কয় যেন ভালবাসি...
কিন্তু কাহারে?
মেঘবালিকা সাজে,
স্বপ্নের পঙ্খিরাজে,
কি যে বলে আজেবাজে....
"সে তো তোমারে"।

শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

নীল কবিতা

কবিতা যেখানে নীল
ফুল যেখানে সংখ্যা
শিউলী যেখানে অমর
প্রেম যেখানে কেবলই একটা মাত্রা,
আমি মাটি ভেদ করে
বের করে আরেক আকাশ
সমান্তরাল রশ্মির গাণিতিক সূত্র ধরে
সে পথেই করিব যাত্রা।
শনির বলয় কাটাতেই দেখি
গোড়ায় গণ্ডগোল,
আমি কি শুরু করব নতুন করে...
না'কি আকাশগঙ্গার ওপার থেকে
খুজে নেব কলমিফুল?
.
December 17, 2018
Exam hall.

বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮

দেবী

আজ অনেক দিন পর ডায়রি নিয়ে বসেছে সম্রাট। একটা ডায়রি নিয়ে কয়েকটি নাম লিখেছে। এ নামগুলি তার সারা জীবনের হাজারও নারী থেকে বাছাই করা কয়েকটি নাম।

সম্রাটের জীবনে কতগুলি নারী আছে, যারা তার কাছে দেবীর মত নিষ্পাপ। সম্রাটের মতে দেবী হতে গেলে কয়েকটি শর্ত পুরন করতে হবে। যেমনঃ ১. মেয়েটি কোন আত্মীয় হতে পারবে না। ২. মেয়েটির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থাকতে হবে। ৩. ভালবাসা থাকলেও মেয়েটির প্রতি থাকবে না কোন কামভাব।

সম্রাট যে এমনিতে খুব পিওর চরিত্রবান তা কিন্তু নয় আবার চরিত্রহীনও বলা যায় না। মাঝামাঝি অবস্থান বলা চলে।

ডায়রিতে লিখা একের পর এক করে তিনটি নাম।

মিলিঃ মিলির সাথে আমার পরিচয় প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় একটি কোচিং সেন্টারে। ক্লাস ফাইবে। নরসিংদী থেকে বোনের সাথে সিলেটে একমাস ছিল মাত্র। ও তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। মাস্টার মশাইয়ের দেওয়া কোন অঙ্কে ফেসে গেলে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিত আর দুই হাতেকে ডানা বানিয়ে ছুটতে পারত খুব। ব্যাস! কেমন করে জানি একটা ভাল লাগার জন্ম নিয়েছে। বছর দুই পরে বুঝলাম এই মেয়েটি আমার জীবনের প্রথম প্রেম। চব্বিশ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনন সন্ধ্যান পাইনি মিলির। নিঃসন্দেহে মেয়েটি আমার জীবনে দেবীর মতই পবিত্র।


তুলিঃ তুলি হচ্ছে সেই মেয়ে যার সাথে ভার্সিটি লাইফের প্রথম পরিচয়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। অনেকটা অবচেতন মনেই একটা নিষ্পাপ ভাললাগার জন্ম নিয়েছিল। জানতাম ও কুমারী ছিল না, তবুও আমার কাছে ও আমার হৃদয়ে দেবী হয়েই ছিল। আমার কাছ ও ছিল নিষ্পাপ প্রতিমার মত। আমি ওর নিষ্পলক আখির দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, কত সুন্দর ইশ্বরের সৃষ্টি। মাঝখানে মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছিল অনেক দিনের জন্য। আমার হৃদয়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষাজুরে সে নিরবে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেন জানি ও ফিরে এসে শেষ শর্তটি ভেঙ্গে দিল। আমি আমার দেবীর পবিত্রতাকে অপমান করতে চাইনি। কিন্তু আমি তো দেবতা নয়, রক্তে-মাংসের মানুষ। নেশার কাটার পর মন্দির ভাঙার অনুভূতি আমাকে নাকাল করে দিল। দূর থেকে অবচেতন যেন চিৎকার করে বলল, "তুই পাপী। দেবীর অসম্মান করেছিস, তুই পাপী।" যদিও আমি জানি, আমি পাপী নয়। কিন্তু জীবন থেকে যে দেবী হারিয়ে গেল। তুলি এখনো আছে কিন্তু দেবী হয়ে নয়।


অধরা স্পর্শঃ অধরা স্পর্শের আসল নামটা প্রকাশ করার সাহস এখনো করে উঠতে পারিনি। প্রথম দেখায় তার লাজুক চোখের দিকে একবার তাকানোটাই ছিল মনে হয় তুলি পরবর্তী জীবনের ভূল। তাকে দেখে প্রতিবারই মনে হয় অনেক কিছু হারিয়েই বোধয় বিশেষ এমন একজনকে খুজে পেয়েছি আবার অনেক পেয়েও যেন পাইনি কিছুই। যাকে প্রথম দেখায় এতটুকু বুঝেছি, এ দেবী এত সহজ নয়। আমাকে ভূগাবে অনেক। সে একেবারে কখনো হারাবে না, আবার কখনো হবে না শুধুই আমার। না হোক আমার, না আসুক জীবনে। তবুও থাকুক নিষ্পাপ। আমি দূর থেকেই দেবীর পুজো দেব।

কল্পনায় একদিন

হয়তো বা এটা শুধুই একটা কল্পনা
তোমি এক পৃথিবীর চাপা কষ্ট নিয়ে
বিকৃত মুখ মন্ডল চেপে ধরবে আমার বুকে,
বর্ণহীন সেই অশ্রুজলে ভিজে যাবে আমার সাদা টি-শার্ট।
.
না, সেদিন আর কোন তাড়া থাকবে না
অন্য কোথাও যাওয়ার নেই তোমার
আর কেউ অপেক্ষা করেও থাকবে না তোমার জন্য
তোমার নিঃশ্বাশ-প্রশ্বাশেই শুকিয়ে যাবে টি-শার্ট
শুধু থেকে যাবে নোনাজলের আঁকা একটি ক্ষীণ রেখা।
.
সেই ক্ষীণ রেখাটিকে আরও ম্লান করে দিতে
আলতো করে চেপে ধরব তোমার হাত।
তোমার সম্মোহনী চোখের লাজুক হাসিতে
স্বর্গ নেমে আসবে পৃথিবীর পথে।
শুধুই আজকের জন্য নয়
নতুন একটি আগামীর জন্য।