শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

কামিনী-কথন

শৃঙ্খল! যেনো কোন অদৃশ্য শৃঙ্খলে বেঁধে রাখা অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ। কি হবে, কখন হবে সব কিছুই অজানা, এমন হবে কি না তাও। ইচ্ছা আর আকাঙ্খা যেন মহাশূন্যে অজানা গন্তব্যে ছুড়ে দেয়া যোগাযোগ ছিন্ন উপগ্রহ। মাঝে মাঝেই মনে হয় শ্বাস রোধ আসছে, দিলকা' দারকান এত তেজ হয় যেন হিমালয়ের শৃঙ্গ থেকেও শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। বলার মতো হাজারো গল্প সেতারের সুর হয়ে বাজতে থাকে, আবার যেন প্রকাশ করা মাত্র মাদলের পর্দা ফুটে সম্পূর্ণই অচল হয়ে যাবে। কোন এক শরতের ভোরে শবনম ভেজা কান্না নিয়ে হয়তো হারিয়ে যাবে শিউলি, তার বিরহে কাতর হয়ে সবুজপল্লবে লুকিয়ে থাকা কামিনীর বিসর্জনের উপাখ্যান কবির পদ্যে অবস্থান খুঁজে পাবেনা।
  
মল্লিকাদের মৌসুমে হারানো শেফালীর শুরুটা কিন্তু তারও দেড় যুগ আগে; কল্পনায়। কলমে-কলামে বর্ণ-অক্ষরে আঁকা ছিল ছবি। এমন নয় যে, তাঁকে প্রথম মুলাকাত মাত্রই কালের গহ্বরে স্তুপচাপা স্মৃতি তাঁকে চিনতে ভূল করেনি। আর দশজনের মতোই একটি সাধারণ শুরু, কোন এক বিকালে হঠাৎই চোখে পড়ে পুরনো ডাইরিটা। স্বর্ণলতার মতো তনু, প্রশস্ত ললাটের নিচে যুক্ত ভ্রু, ডাগরআঁখি, বাঁশির মতো নাক, মিহি ঠোঁট, গলায় তিল আর শরীর জুরে ছেয়ে থাকা সোনালী পশম।
  
প্রায়শই ভাবতাম; এ কল্পনা হয়তো অতিরঞ্জিত... এতসব একসাথে হয় না-কি! হলেও নিশ্চয় সব মিলিয়ে যে রমনী হবে সে আফ্রোদিতি'র মতো হবে না। তাঁকে চিনতে সময় লেগেছে অনেক কিন্তু তার লাবণ্য যে মহাকাব্যের বর্ণনায় থাকা দেবীকেও ছাড়িয়ে যাবে এতদূর কল্পনা করাটাও বোকামির সামিল মনে হয়েছিল।
  
দেখিলাম! অতঃপর তাকে দেখিলাম। আমি এত বছরেও কেবল তার মুখশ্রী দেখে শেষ করতে পারিনি, তার চোখের দিকে তাকানো নিষ্পলক আঁখি জগতের আর কিছু দেখতে চায় না; তার কন্ঠ আহামরি সুশ্রবণীয় নয় তবু শুনতে এত ভাল লাগে মনে হয়, কেন এই ধরনীটা জান্নাত নয়? কেন সময় দ্রুতই ফুরিয়ে যায়।

এপারে সৃষ্টিকর্তা বড় অভাব দিয়েছেন বটে; হয়তো আমার হবে, হয়তো হবেনা; ওপারে নিশ্চয় কোন অভাব হবে না। সত্যি-সত্যিই আমাকে যদি সৃষ্টিকর্তা জান্নাত দান করেন... আমি হুর-পরীদের চাইনা, আমার তাকে চাই, শরতের ভোরে তীব্র আর্তনাদ নিয়ে হারিয়ে হাওয়া শিউলি ফুল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন