বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৯

কুদ্দুসদর্জি

জমিদার বাড়ির করা একটি তালিকায় সেরা দর্জির তালিকায় নিজেকে দ্বিতীয় অবস্থানে দেখে সবচেয়ে সুখী মনে করে কুদ্দুসদর্জি। নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই। চার ছেলে পাচ মেয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা নিয়ে বিশাল সংসার তার। বড় ছেলের মেধা ভাল বলে জমিদার বাড়িতেই চাকুরী জুটিয়ে নিয়েছে। বিশাল জমিদার বাড়ির পরিধিও বিশাল। কানাঘুষা শোনা যায়, ঐ বাড়ির কোন এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কাজের মেয়ের ভূমিকায় থাকলেও মেয়েটি জমিদার বাড়ির আত্মীয় বলে কথা। হেলায় তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। কুদ্দুসদর্জির বাকী তিন ছেলে এখনো বেকার। মেয়েগুলি নিজেরা স্বাবলম্বী হতে চাইলেও লোকে কি ভাববে এই চিন্তায় এখনো বের হতে দেয়া হয়নি। ছোট মেয়ের কথা আলাদা। ও একটু বেপরোয়া, কাউকে মানতে চায় না। কিছু না কিছু করে দেখাতে চায়।
কুদ্দুসদর্জি যে গ্রামে বাস করে সেখানে পাচ মোড়ল মিলে এলাকাটা শাষন করে। যদিও জমিদারী প্রথা এখন আর নেই তবুও সেই ডাক আর উপাধীটা লোকমুখে রয়ে গেছে। এর সাথে চৌধুরী, তালুকদার, মির্জা আর লষ্কর মিলেই সব সিন্ধান্ত নেয়। নিজেরা নিজের মাঝে মনোমালিন্য হলেও বৃহত্তর স্বার্থরক্ষায় তারা এক। খান বাড়ির লোকেরা প্রভাব প্রতিপত্তির লড়াইয়ে দুইবার উত্থান হলেও নানা নাটকীয়তার পর প্রতিবারই পাচ মোড়ল মিলেই শেষ পর্যন্ত তাদের শায়েন্তা করেছে। শেষ বার চৌধুরীরা তো খানদের পক্ষ নেয়া চন্ডালপাড়ার দুই বাড়ি এমনভাবে গুড়িয়ে দিয়েছে যে ভবিষ্যতে আর কেউ নিজের অপর্যাপ্ত শক্তি নিয়ে মাথা তুলে দাড়ানোরো চেষ্টা করবেনা। এই বৃহত্তর খেলায় কুদ্দুসদর্জি নেহাতই ক্ষুদ্র এক পিপীলিকাসম। এইসব নিয়ে তার ভাবলে হবে না। তার অনেক চিন্তুা। তিনবেলা পেটপুরে খাওয়ার চিন্তুা, অসুখে পড়লে কবিরাজের চিন্তুা, বাচ্চাদের পড়াশুনাও করাতে চায় আবার ভাল একটা ঘর বানাবার স্বপ্ন তো অনেক দিনের।

কুদ্দুসদর্জির অভাব পুরোটা যে তার নিজের দায় সেটা কিন্তু নয়। তাকে পাচ মোড়লকে খুশি রাখতে হয়। এই যেমন, একবার মির্জাসাহেব বলে দিলেন, "তোর তো অনেক শত্রু, নিরাপত্তার জন্য কিছু চাকু-বল্লম কিনা দরকার।" এ যুগে মোড়লবাড়িতে তখন বন্দুকগানের নতুন আবির্ভাব, চাকু-বল্লম অকেজো হয়ে পড়েছে। একথা তো আর মুখ ফুটে বলা যায় না। ওদের খুশি রাখায় বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে দেখা যাবে এ ঘরে ইদুর আছে বলে সারা ঘরই খুড়ে নষ্ট করে ফেলবে। সেদিনটাও কথা আজও ভূলেনি কুদ্দুসদর্জি, তার কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে চাকু-বল্লম কিনে তার ছেলেদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। সেদিন সাদাকালো টিবিতে সেদিন একটা খবর দেখেছিল কুদ্দুসদর্জি,
"রাশিয়া থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার অশ্র ক্রয়"
আট হাজার কোটি টাকা আসলে কত ঠিক অনুমান করতে পারে না কুদ্দুসদর্জি কিন্তু গর্বে তার বুকটা ভরে গেল। সত্যিই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন