রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯

শুনিনি এমন কথা

ডায়রিটাতে লিখা তারিখটি এক দশক কাটিয়ে দিয়েছে ভাবতেও অবাক লাগে। সময় খুব দ্রুতই চলে যায়। পুরোনো ডায়রি মাঝে মাঝেই নাড়াচারা করি। অতীত কিংবা ইতিহিসের পৃষ্ঠদেশে ভেসে বেড়াতে সব সময়ই ভাল লাগে। ডায়রিতে যেমন লিখা আছে তেমন ভাবেই উপস্থাপন করছি।

ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮ সকাল
হেডিংঃ শুনিনি এমন কথা

অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি মোটামোটি শেষ করেছি। হাউজ টিউটরকে বললাম, "স্যার প্রবেশপত্র তো এখনো পাইনি।"
পরে বুঝলাম আব্বার ইচ্ছা আমাকে পুনরায় অষ্টম শ্রেণীতে রাখবেন। পঞ্চম শ্রেণীতেও এমন হয়েছিল। উনার ধারণা আমি হয়ত এসএসসির চাপ নিতে পারবনা। আমি (কি করব না করব সে বিষয়ক)  নিজস্ব একটা সংবিধান আছে। এক ক্লাশে দুইবার থাকা সংবিধান বহির্ভূত। তাছাড়া সে সময়ে আমার বিশেষ একজন সহপাঠিনীকে সিনিওর হিসাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখন শিউর হয়ে গেলাম আমার আর বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। খুবই খারাপ লাগছে।
ইতিমধ্যে আমার সেই সহপাঠিনীর মা হাউজটিউরকে ফোন করে বললেন, "আমার মেয়ে কার সাথে যাচ্ছে?"
স্যার আমার ক্লাশের অন্য দুই সহপাঠিনীর নাম বলে বললেন যে তাদের সাথে যাবে। পরে দেখা গেল ওরা আসেনি বরং অন্য সহপাঠীর সাথে সে আসছে। তাদের যাবার রাস্তা আমাদের বাড়ি থেকে দুইশ কদম দুরত্বে হবে। বাকীরা কেন আসেনি তা জানতে স্যার আমাকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
স্যারকে এসে জানালাম যে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে না। স্যার হুট করেই আমাকে বললেন, "তোকে একটা কথা বলি, সাবধান কাউকে বলবি না।"
আমি বললাম, ইয়েস স্যার।
আমার সেই বিশেষ সহপাঠিনীর নাম উল্ল্যেখ করে স্যার বলেলেন, " ঐ মেয়েটির তোর প্রতি দূর্বলতা আছে। সাবধান, আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবি না কিন্তু।"
এমন কথা তো কখনো শুনিনি, এটাই প্রথম।
.
ডায়রিতে লিখা এক সময়কার তীব্র অনুভূতিগুলি এখন আর নাড়া দিতে পারে না, কখনো কখনো তো হাস্যকর মনে হয়। অথচ, এই অনুভূতিগুলিই কি না এক সময় ঘুমোতে দিতনা।
_______

এবং অতঃপর,
বার্ষিক পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জন করার পরও শেষ পর্যন্ত তিনদিন না খেয়ে স্যারদের রিকুয়েস্টে প্রমোশন পেলেও নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রি করতে দেয়া হয়নি। আমি সেই সহপাঠিনীর জুনিয়র হতে রাজি ছিলাম না। পরে স্কুল বদলে দূরে চলে যাই। স্যারের কথা মেনে আগ বাড়িয়ে কখনো কিছু করতে যাইনি।
তখন আমি সিলেট সরকারী কলেজে পড়ি। হঠাৎই একদিন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে তার ফোন এলো।
হ্যালো....
ততদিনে কিশোর বয়সের সেই আবেগ আমি কাটিয়ে উঠেছি। সময়ের ফেরে এক সময়কার চির আকাঙ্খিত মানুষটি যখন বলল তাকে এখনো আগের মত ভালবাসি কি না আমি কত নির্বিকারভাবেই বলে দিলাম,
"তোমি তো আর আগের মত নেই, আমিও না।"

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯

মেয়েবন্ধু

বলছি না যে একটা মেয়েবন্ধু থাকতেই হবে।
অনেকেরই তো মেয়েবন্ধু নেই
আমারও না হয় নাই থাকল,
তাতে আমার তেমন কিছু আসে যায় না।
তাছাড়া মেয়েবন্ধু পোষার মত মুরদও নেই;
না না, টাকাকড়ি তেমন কোন ব্যাপার নয়
মধ্যবিত্তের আর দশটা ছেলের মত
আমিও টেনেটুনে চালিয়ে নিতে পারব।
যেদিন পকেটে মহাশূণ্য দেখা দিবে
পাচ টাকার বাদাম কিনে বুঝিয়ে দিব,
"এই যে দেখ একেকটা বাদামের ভিতর দুইটা দানা
একটা তোমি, আরেকটা আমি।"
একথা শুনার পর সে নিশ্চয় আর খুব রাগ করে থাকতে পারবেনা
সুখ-দুঃখ কল্পনা করে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকবে।

কোন একটা বন্ধনে জীবনে কাটিয়ে দেওয়া...
না না, এ আমার সাথে স্বভাবে খায়না।
আমি স্বপ্নলোকে ভূবন চষে বেড়াই
ফরাসী, নিগ্রো, মার্কিনী, রুশ আর পার্সিয়ান তরুণীরা
প্রতিনিয়ত উকি দিয়ে যায়।
ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়ে
সুনীলদার মার্গরিটের সাথে পরকিয়া প্রেমে মজি।
আমি তপু হয়ে অযথাই পিয়াঙ্কাকে খুজে বেড়াই,
ক্রিস্টি, হেলেন, পদ্মাবতী আরও যে কত নাম;
বলে কি শেষ করা যায়।
সেসব কি এক মেয়েবন্ধুতে পোষানো যায়?

তবে একটা কথা কি...
এই ধরো সাজের বেলা রূপসার তীরে বসে আছি
গোধূলির আকাশ তখন অন্ধকারে অবগাহন করতে চলেছে,
কিংবা, চারপাশে অজস্র মানুষগুলি যে যার মত ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে
হঠাৎই নিজেকে একা একা লাগছে
ভীষণ একা
মনে হচ্ছে কোন এক ললনা আমার হাতটা চেপে ধরে বসে থাকুক।
বুকে মাথা রেখে গাঢ় নিঃশ্বাসে জানিয়ে দিক তার অস্তিত্ব
আমি আছি,
আমি আছি তোমার পাশে।

মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯

ভালবাস?

তখন তার বয়স কতই বা... চৌদ্দ কি পনের। জীবনের প্রথম মাহেন্দ্রক্ষণ, সেই প্রথম কাউকে ভালবাসি বলা। ঠিকভাবে বলতেও পারেনি, ছেলেটির চোখ বেয়ে নেমে আসা জলে হারিয়ে গিয়েছিল বাকী সবটুকু। কতই না আবেগ আর স্বপ্ন লুকিয়ে ছিল সেই নোনাজলে। না, সে নোনাজলের কোন মূল্য ছিল না বিপরীত পাশে দাড়িয়ে থাকা কুমারীর কাছে। সেই প্রথম পরাজয়ের পর অনেকটা সময় হারিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণগহ্বরের কালে।

তারপর দিন হাওয়ায় গা ভাসিয়ে সাথে নিজেও বদলে যায় কতকটা। তারপর এমনও এক সময় এল যখন মনে হত, কাউকে ভালবাসি বলাটাই বোধয় পৃথিবীর সবচে' সহজ কাজগুলির একটি। তারপর কতবার কতজনকে যে "ভালবাসি" বলছি তার হিসাবটা আর ডায়রিতে লিখেও হিসাবটা রাখা যায়নি। কাউকে নিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে এক একটি ডায়রির সবগুলি পাতা আবার কেউ বা একটা কবিতার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলি নাম কিভাবে যেন লিখার পরও দু-একটি নাম বাদ পড়া আবিষ্কৃত হয়।

সেই সব ইতিহাসকে পেছনে আজ কারো সামনে দাড়িয়ে সে। না, সে জীবনে আসা আটদশটা মানুষের মত নয়। তাকে নিয়েই বাকী জীবনটা কাটিয়ে চায়। কল্পনায় সে ভাবে, এ আমার বধূ, শুধুই আমার। অথচ, কল্পনারূপী বধূ যখন হঠাৎই প্রশ্ন করে "ভালবাস আমায়?"

এক মুহুর্তের জন্য চুপ হয়ে যেতে হয়। বলতে গেলে গলা ধরে আসে। নিজের প্রতি লজ্জা হয়। না জানি জীবনে কতজনকে কথাটি বলা হয়েছে। কতই না সস্তা বাক্য। এ সস্তা বাক্য দিয়ে বিশেষ মানুষকে তো অপমান করা যায় না।
"আমি শীঘ্রই ঘরে বিয়ের কথা বলব।"
মাটির দিকে তাকিয়ে প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে হয়। অর্ধসত্য কিংবা মিথ্যা অনুভূতিতে জড়িয়ে পরা সে মানুষটি আজ সত্য বলতেও দ্বিধাবোধ করছে।