করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সমগ্র বিশ্ব যখন আতংকিত তখন (সম্ভবত একমাত্র) আমরাই বলতে পেরেছিলাম, আমরা করোনা ভাইরাসের চেয়েও শক্তিশালী। আমরা নানান বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে খুঁজে পেয়েছিলাম, এই ভাইরাস বিধর্মীদের জন্য, এই রোগ গরম আবহাওয়ায় অনুপযোগী আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। আমাদের যখন এয়ারপোর্টে বন্ধ করার কথা ছিল তখন ঘোষণা করেছি, এটাই পৃথিবীর সবচে বেশি প্রযুক্তির এয়ারপোর্টে যদিও সেখানে থার্মাল স্কেনার কাজ করেনা। সবাইকে অবাক (নির্বোধ প্রমাণ করে) করে দিয়ে করোনা ভাইরাস সত্যি সত্যি একদিন দেশে চলে এল। তখন (বিবেকবান)জনগণ দাবি করল, "অতিশীঘ্র লকডাউন চাই, সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ চাই"। সময় খানিকটা নষ্ট করে ভাইরাসটিকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ দিয়ে তারপর ছুটি ঘোষণা করা হল। আমরা ঈদের/পুজোর ছুটি মনে করে বাসায় অবস্থান না করে ছুটলাম দেশের বাড়ির দিকে। তারপর বাসায় টেলিভিশন অন করে নিজেরাই বলতে শুরু করলাম, বাঙালিদের আক্কেল দেখ!
মসজিদ বন্ধ করা যখন জরুরী তখন কিছু অতি ধার্মিক মানববন্ধন করল মসজিদ বন্ধ করা যাবেনা। পাশ্ববর্তী দেশে ভারতে তাবলীগের মাধ্যমে করোনা বিস্তারে ধর্ম নিয়ে উপর ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপহাস করার সুযোগ বাড়ানো ছাড়া আর কিছু আছে বৈ কি? তারপর দেখা গেল দেশের সব জেলায় কারো না কারো দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় বাচ্চা হয়েছে এবং কিভাবে করোনা ঠেকানো যাবে বলে আবার মারা গেছে।
তখনো কিছু মানুষ কাজ করছিল, দিনে আনে দিন খায় মানুষদের জন্য। সেখানেও লোকসমাগম দেখে সবার আক্কেলগুড়ুম। ঢাকা সিটির মহামান্য মেয়রের হাত ধুয়া না বাদই দিলাম।
তখনও ডাক্তারদের পিপিই নিশ্চিত করা হয়নি। তাদের নিরাপত্তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের সমালোচনার তীর ছুটে গেল সেদিকে। এটা ঠিক যে, ডাক্তারদের চাহিদার কিছুই দিওয়া হয়নি, তবুও এই বিপদের কান্ডারীদের কাছ থেকে আমাদের চাহিদা আরও বেশি ছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ত্রাণ পৌঁছে গেল প্রত্যন্ত অঞ্চলেও, কিন্তু দূর্নীতির কারণে এক সময় দেখা গেল করোনা রুগী থেকে বেশি ধরা পড়েছে ত্রানচোর। এই সকল চাটার দলের কারণেই শেখ মুজিবুর রহমানের ষাটের দশকের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা সত্তরের দশকের মাঝামাঝি হ্রাস পায়। তখন তাদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে হয়ত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎই অন্যরকম হত।
বৈশ্বিক এই ক্রান্তিলগ্নে নির্দিষ্টভাবে কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। সমস্যা আমাদের নিজেদের মাঝে, আমরা নিজেদের কাজ, নিজেদের দায়িত্ববোধ পালন না করে অন্যদের নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করি। এটা হয়ত আমাদের জাতিগত সমস্যা। উপদেশ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই তাই ছোট্ট অনুরোধ সবার প্রতি, আসুন দায়িত্বশীল আচরণ করি।
নিজের কর্তব্য পালন করে অন্যদেরকেও উৎসাহিত করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন