সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

পত্রে প্রথম প্রেম

মিলি,
দীর্ঘ তের বছর পর তোমার নামে পত্র লিখছি। যেদিন শেষবারের মত তোমাকে দেখেছিলাম, তারও দুই বছর পর যখন অনুধাবন করতে পেরেছিলাম মিলি নামের সেই চঞ্চল বালিকাটিই আমার প্রথম প্রেম তখনই লিখা প্রথম পত্রের পর আজ দ্বিতীয় বারের মত পত্র লেখার ভূত মাথায় কেন চেপে বসল জানিনা। কোথায় আছ, কেমন আছ জানিনা; আর কিছুই জানিনা বলেই বাকী সবকিছু চেপে যাই।

এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়ে তোমার সামনে দাড়ানোর একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম মনে মনে। পৃথিবী ব্যাস্ততা আমাকে গ্রাস করে ফেলল কেমন করে যেন। অনর্থক পৃথিবীতে নিজের আবেগের মূল্য কি করে নিরর্থক হয়ে গেল, তার ব্যাখ্যা আমি হয়ত দিতে পারব না। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকার সংখ্যাটা এক যুগ অতিক্রম করে পনেরতে পা দিল। তবু্ও দেখা হলনা।

দৈবক্রমে অন্য কোন তরুণীর মাঝে তোমার সেই মায়াবী হাসি, চঞ্চলতা, পাতলা ঠোঁট বা গলার নিচে এক চিমটি তিল খুজে পেলে যেন উন্মাদ বনে যাই। কলমি, শিউলী, অধরা স্পর্শ,  কিংবা কৃষ্ণসাগর এইসব যেন একই অস্তিত্বের ভিন্ন রূপাংশের ভিন্ন নাম। "এই তো সে, তাকেই তো আমি খুঁজছি।" ভ্রান্তিবিলাসে কতবার সে ভূল করেছি, সেই হিসাব স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ মিলাতে পারবে কি না জানিনা। ক্ষণিকের মোহে যে তাসের ঘর বাধি, বেলা শেষে সে খেলা ঘর ভাঙা ছাড়া আর কোন উপায় বাকী থাকেনা। হৃদয় দ্বারে অনাগত তরুণীরও বুঝতে পারেনা যে মিলি নামের সেই বালিকাটিকে খুঁজে পেতেই হৃদয় উন্মুক্ত করে প্রতীক্ষা করছিলাম, তারা ভূল করে এসে পড়েছে।

মাঝে মাঝে জাগতিক সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার স্বাদ জাগে। স্বপ্নের ঘোরে কয়েক কদম সম্মুখপানে এগুতেই দেখি, শেকড় ছিঁড়ে যাবার উপক্রম... দৌড়ে এসে হাল ধরি। তোমাকে আর সেভাবে খুঁজা হয়না। পনের বছর আগের সেই প্রথম প্রেমকে হৃদয়কুঠিরে অযন্তে অবহেলায় লালন করে আসছি। সত্যি বলতে মিলি, তোমার শূণ্যতা কখনোই সেভাবে উপলব্ধি করিনি। কেন জানি মনে সব সময় তোমি আমার পাশেই আছ। চোখের পাতা এক করলেই তোমার অনাবিল সৌন্দর্যরূপ প্রতীয়মান হয়। তোমাকে ভালবাসতে পদার্থবিঞ্জানের সূত্রে রক্তে-মাংসের কোন দৈহিক অস্তিত্বের প্রয়োজন বোধ করিনি এক মুহুর্তের জন্যও।

চাইলেই হয়ত খুঁজে বের যায়। তবু্ও খুঁজিনা। কেন জান? ভয় হয়। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। দীর্ঘ এই সময় নিশ্চয় তোমাকেও বদলে ফেলেছে অনেকখানি। আমি যে মিলিকে ভালবাসি সেই মিলি কি এখনো দু হাত ছড়িয়ে ভোঁ দৌড় দেয়? গনিতের কোন ধাঁধায় ফেসে গেলে কপাল না কুঁচকে আগের মত মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়? সেই আগের তোমাকে না পাওয়ার ভয়টাই সবচেয়ে বেশি। তাই নিরবে নিভৃতে মিল্কিওয়ের থেকেও প্রশস্ত হৃদয়ে ভালবেসে যাই তোমাকে।

ইতি
প্রাইমারির কোচিংয়ে তোমার পাশে বসা ছোট ছেলেটি
অঙ্কে ফেসে যার দিকে ছোট্ট একটা দিলেই সমাধান বেরিয়ে আসত।

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

ফিরে এসো না প্রিয়তমা

প্রিয়তমা,
অসময়ে আর ফিরে এসো না।
কতগুলো শূণ্য প্রহরের ব্যাপ্তি
হারিয়ে যাওয়া মেঘের ভাঁজে সপ্তমীর চাঁদে
নগ্ন হৃদয়ে কৃষ্ণস্নান
তোমার প্রযোজনকে অস্তিত্বহীন করে তুলেছে।
.
হারিয়ে যাওয়ার পর কতগুলি ধসূর স্মৃতি নিয়ে
উষার আবির আর ঈষার তীক্ষ্ণ রক্তস্রোতের মাঝে
দুপুরের গগনবিদারী রোদে
এককাপ চা খাওয়ার দিনগুলো খারাপ ছিলনা।
মাঝে মাঝে কল্প ভ্রমে তোমিও বসে পড়তে আমার সাথে
.
আজ আর কোন কল্পলোকের তন্দা নেই
মাঝে ডাস্টবিন জুরে নিয়েছে ক্যালেন্ডারের একুশটি পাতা
সাক্ষাৎ দেবী দর্শন বহুকাল পরে।
কত দীর্ঘ এক রাতের পর
যেন আবার উদিত হয়েছে ভাস্কর।
সেই নীল শাড়ী, কাল টিপ, রেশমী চুড়ির কনকন
চোখে পড়ার মত কোন পরিবর্তনই নেই।
আগে শাড়ীতে এতটা অভ্যস্ত ছিলনা
সারাক্ষণই একটা উৎকন্ঠা কাজ করত
আজ আর সেটা নেই, সহজ সাবলীল।
শাড়ী পরাটাও যেন একটা আর্ট।
হাতের কনকন শব্দটাও যেন অনেকটা যান্ত্রিক
আগের মত অসময়ে বেজে ওঠেনা।
শ্যামবর্ণ তনু ফর্সা হয়েছে অনেকখানি
চোখদুটিতে সুক্ষ্ম কারুকার্য,
নিচের দিক কালচে ভাবটাও নেই।
স্পষ্ট দৃষ্টি, প্রশ্ন করে এখন আর লজ্জায় মুখ লুকায় না
অনেক সংযমী আর আত্মবিশ্বাসী
যেন চাইলেই এখন পৃথিবী জয় করে নিতে পারে।
.
আমি কি তাকেই ভালবাসতাম?
সময়ে ফেরে অসময়ে যে ভালবাসা ফিরে এসেছে
তাকে তো আমি ভালবাসিনি।
আমি তো সেই ষোড়শীকে ভালবাসতাম
যার চঞ্চল চোখ এক মুহূর্তেও স্থির থাকত না
নতুন শাড়ী পরে সামনে এসে
লজ্জায় বারবার মুখ লুকিয়ে নিত
সারাক্ষণই শাড়ী সামলাতে গিয়ে
হাতের চুড়ির কনকন ছন্দ
শ্রবন ইন্দিয়কে শুড়শুড়ি দিত
সারা পৃথিবী নিয়ে বিশাল সংশয় থাকত তার মাঝে।
.
আমি বদলে যাওয়া এই অষ্টাদশীকে কখনো ভালবাসিনি
হয়তো পারবও না।
তাকে হারিয়ে কষ্ট পেয়ছিলাম সত্যি
কিন্তু বদলে যাওয়ার কষ্ট তার সমকক্ষ নয়।

ফিরে এসো না আর প্রিয়তমা
সময় হারিয়ে, অসময়ে ভালবাসা নিয়ে,
আর কখনোই ফিরে এসো না।
.

.
কবিতাঃ_ফিরে_এসো_না_প্রিয়তমা