ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর—বাংলাদেশের অন্যতম অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। পর্যটকদের চোখে এটি যেন এক খণ্ড সাদা হীরা, আর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জীবিকার সম্ভাবনা। কিন্তু পাথর উত্তোলনের পক্ষে যুক্তি দেওয়া আজ পাথর গেলার মতোই কঠিন।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপট:
ব্রিটিশ আমল থেকেই ভোলাগঞ্জ ছিল পাথর উত্তোলনের প্রধান কেন্দ্র। ভারতের রেললাইনের অধিকাংশ পাথরই এসেছে এখান থেকে। একসময় এখানে সচল ছিল রোপওয়ে, যা ছাতক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল—আজও যার অবশেষ দেখা যায়।
কিন্তু গত সরকার প্রায় শতবর্ষের পুরোনো এই কোয়ারিকে হঠাৎ পর্যটন স্পটে রূপান্তর করে নাম দেয় ‘সাদা পাথর’। সমালোচকদের দাবি—এটি ছিল একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার কৌশল, যাতে তিনি বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করে বাজার দখল করতে পারেন।
পর্যটন বনাম পরিবেশ:
পর্যটন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত। আগে অজানা ভোলাগঞ্জ এখন সবার মুখে মুখে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—একটি জনপদের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে এই পর্যটন কতটা টেকসই হবে?
আমাদের পর্যটন উন্নয়ন হতে হবে এমনভাবে, যাতে পাহাড়, সমুদ্র ও সমতলের মানুষের জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের সাথে সমন্বয় থাকে।
সংঘাতের মূল কারণ:
১. ক্ষমতার রদবদল – পুরোনো রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের স্থলে এসেছে নতুন সিন্ডিকেট, যারা সুযোগ পেলেই লুটপাটে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
2. বেকারত্ব – কোয়ারি বন্ধের পর বহু মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। যারা রয়ে গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্বের যন্ত্রণা সহ্য করছে।
3. প্রশাসনের নীরব ভূমিকা – প্রশাসনের সরাসরি বা নীরব সমর্থন ছাড়া এই অবৈধ উত্তোলন সম্ভব নয়।
সমাধানের পথ:
একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত কোনো সমাধান নয়। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে প্রাকৃতিকভাবে পাথর আসে—কতটুকু উত্তোলন পরিবেশের জন্য সহনীয়, তার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা জরুরি। সেই অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিতভাবে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে, একই সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও রক্ষা পাবে।
এ ছাড়া, সাদা পাথরের পর্যটনকে স্থানীয়দের জীবিকার সাথে এমনভাবে যুক্ত করতে হবে যাতে তাদের আয়ের উৎস বৈচিত্র্যময় হয়। স্থানীয়দের সচেতন করতে হবে—প্রাকৃতিক সম্পদ অসীম নয়; সংরক্ষণ ছাড়া এর অস্তিত্ব একদিন হারিয়ে যাবে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। একে রক্ষা করা শুধু পর্যটনের স্বার্থে নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার অংশ।