সে ঠিক সামনে
দাড়িয়ে আছে আনমনে
তবুও খুজে পাইনে
চলে আসি দূরে
ইট পাথরের নীড়ে
কাল বহে ধীরে
চোখ বুজে শেষে
খুজি ভিন দেশে
সতী বেহুলার বেশে
আমি মরে একবার
বেচে উঠে নিঃসাড়
সামনে যাই আবার
সে ঠিক সামনে
দাড়িয়ে আছে আনমনে
তবুও খুজে পাইনে
চলে আসি...
.....
(চলতেই থাকবে)
শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯
মরিচীকা প্রণয়
শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯
মুক্তি
অনেকদিন পর মায়াবতীর সাথে দেখা।
কাকতালীয় বলা ঠিক হবে জানিনা। যে বাড়িতে তার বর্তমান বাস বাড়ির রাস্তা দিয়ে আমার নিত্য যাওয়া আসা কিন্তু সে চারদেয়ালে আবদ্ধ আর আমি মুক্ত বিহঙ্গ। এখন আমি আর উকি দিয়ে তার খোজ করিনা। সেও আগের মত আমাকে খোজিয়া বেড়ায় না। তার নিকট আত্মীয়কে বিদায় দিতে বাড়ির মূল ফটকে আসা। হয়ত এর আগেও এসেছিল। গানিতিক সম্ভাব্যতার ধাধাগুলিকে সত্যি প্রমাণ করে দিতেই তার সাথে দেখা হয়ে গেল।
-এই 'হাফ লেডিস'?
আমার মাঝে পুরুষত্বের কমতি ছিলনা কখনোই। তবুও কোন কারণে আমাকে 'হাফ-লেডিস' বলে বিব্রত করতে পারলে তার ঠোঁটের কোণে এক চিমটি হাসি ফুটে ওঠে। সে দিনগুলি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। আমি যথাসম্ভব না শুনার ভান করে এড়িয়ে যাওয়া চেষ্টা করলাম। জায়গায় দাঁড়িয়েই পরেরবার জোরে চেচিয়ে ডাক দিল। এবার আসল নামেই ডাকল সে।।
-অপুদা'
আমার সাথে থাকা ব্যাক্তিগত সহকারী বলল, স্যার আপনাকে ডাকছে।
এরপর আর এগিয়ে যাওয়া যায়না। আমি পিছনে ঘোরে চিরায়িত সেই হাসি দিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। বললাম,
কেমন আছ?
-ভাল। আপনি?
-ভাল।
মিনিটখানিক সময় চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম। আর কোন প্রশ্ন খোজে পাইনি। হয়ত সেও না। বললাম, চলি।
সে বলল, একমিনিট দাড়ান।
সে ছুটে গেল ভিতরের দিকে। দুই তিন মিনিট পর ফিরে এসে বলল, "ভিতরে আসুন।"
ভেবেছিলাম, 'এখন না' বলে চলে আসব। কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, "চলো। মাত্র দুই মিনিট কিন্তু।"
তাকে ফলো করে করে তার একটা রুমে ডুকলাম। সে ব্যাস্ত হয়ে আপেল, মাল্টা কেটে সামনের টেবিলে রাখল। মফস্বলে লিভিং, ডাইনিং কিংবা বেডরুম বলে আলদা কিছু নেই। একটা বেডরুমে দুইটা সোফা ফেললে সেটাই অতিথিদের জন্য লিভিং হয়ে ওঠে। এ ঘরে প্রথমবারের মত আসা। আগের বাড়ির রুমের সাথে তফাৎ খালি চোখেই আলাদা করা যায়। রুমটা মাত্রই গোছানো হয়েছে। বিছানায় একটি বাচ্চা ঘুমোচ্ছে। একদিকে একটি দোলনা অন্যদিকে ফ্রিজ, ড্রেসিং, শোকেসে সাজানো একটি পরিপূর্ণ মধ্যবিত্তের রুম।
বিছানায় ঘুমানো বাচ্চাটার দিকে চেয়ে বললাম, বাবুর বাবা কোথায়?
-বাইরে।
-যাক, বাচা গেল। বেচারা যদি দেখে তার বউ পুরোনো প্রেমিকের সাথে কথা বলছে সেটা মোটেও ভাল হতনা।
-ও, সব জানে।
-তারপরও সেটা অতীত। বর্তমান নিয়েই চল। অতীতের সব ভূলে যাও।
-হ্যা, কি আর করা।
যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করছে সে। বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা তার নেই আজ। আমার তো কখনোই ছিলনা। না সেদিন, না আজ।
সে কখনোই খুব বেশি কিছু চায়নি। যেটুকু চেয়েছে সেটুকুও পায়নি।
আমি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে একাই বকবক করছিলাম। তার করুণ আখিই বলে দিচ্ছিল সে কিছু বলতে গেলে জল বাধ ভেঙে বেড়িয়ে আসবে। আজকের দিনের জন্য তার কোন দায় ছিলনা অথচ সে নিজেকে অপরাধীর আসনে বসিয়ে রেখেছে।
আমি গোগ্রাসে কয়েক টুকরো ফল খেয়ে বললাম, এবার তাহলে চলি।
আমার সহকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, "উনি তো কিছুই খেলেন না।"
আমি বলার পরও সহকারী বসের সামনে কিছু খাওয়ার দুঃসাহস দেখাল না।
আসার সময় বললাম, একটা কথা বলি?
-বলুন।
আমি কিন্তু অন্য কারো সাথে বাজি ধরে তোমার কাছে এসেছিলাম।
-সে কি এখন তোমার হয়েছে।
-হ্যা, আমারা সুখে আছি। শীঘ্রই ঘরে বিয়ের কথা বলব।
-মেনে নিবে?
-জানিনা, না হলে দেশ ছেড়ে পালাব৷ তার যদি না হতে পারি তবে আর কারো হব না।
এই বলে পথ ধরে এগিয়ে আসলাম। একসময় রাস্তার বাকে হারিয়ে গেল মায়বতীর চোখ। কিছু দূর যাওয়ার পর সহকারী জিজ্ঞেস করল, সত্যিই কি আপনি কারো সাথে বাজি ধরে ম্যাডামের কাছে এসেছিলেন?
আমি হাসলাম। মানুষ যখন কোথাও আটকে যায় তখন তাকে মুক্তি দিতে হয়। আমি অন্য কারো জন্য তার কাছে এসেছিলাম জানার পর তার আর আমার জন্য অপরাধের বোধ কাজ কবরেনা। তার চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা অশ্রুবিন্দুটুকু মুছে যাবে।
সে এখন নিজেকে নতুন অনাগত ভবিষ্যতের জন্য মুক্তি দিবে।