বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

বৈশাখী ললনা'১৪২৩


_________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি
রক্ত রঙে লাল হয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল।
আমি অবাক হয়ে হাটতে থাকি...
আজকের সকালটাকেও মনে হয় নতুন,
আর কয়টা দিনের চেয়ে আলাদা।
আমগুলি হঠাৎই পরিপক্ব হয়ে গেছে।
কাঠালগুলিও।
ব্যাপার কি?
গতকালই তোমাকে দেখেছিলাম
চৈত্রসংক্রান্তিতে ঘরদোর ঝেড়ে
কৃষ্ণকায় হয়ে গিয়েছিল সেই শ্যামা মুখ।
তবুও এক তিলেক হাসি রাঙিয়ে দিচ্ছিল
বসন্তের শেষ বিকালটিকে।

আমি হাটতে হাটতে তোমার সামনে চলে এলাম।
লাল শাড়ী-চুড়ি-টিপ আর
সিধুঁরের অপূর্ব মিশ্রণ।
ছোট ছোট ঘামের বিন্দু তোমার সারা মুখে ছড়িয়ে আছে।
সেই ঘামের বিন্দু...
সে তো শুধু শ্যামা মুখের সৌন্দর্যই বাড়িয়েছে।
আমি স্থব্দ।
কোন অলৌকিক মোহে নয়।
তোমার সাবলীল সৌন্দর্যে।
এত রূপ তোমার।
আমি তিনশত পঁয়ষট্টিবার নিজেকে হারিয়ে একবার খুজে পাই।

এতক্ষণে আমার মনে হল আজ বৈশাখ।
বৈশাখ এসেছে তোমার শাড়ির আচল ধরে।
তোমি লাল শাড়ি পড়েছ বলেই
বৈশাখ ফিরে পেয়েছে তার প্রাণ।
তোমার চুড়ির রঙে রাঙাল
কৃষ্ণচূড়ার সবকটি হাত।

কিন্তু এখানেই তো শেষ নয়।
তোমার কালকেশে নিমিষেই রঙ বদলাল আকাশ।
কালবৈশাখী ঝড় নেমে এসেছে ঈষান কোনে।
কখনো বা বিদ্যুৎ ঝলকানি,
কখনো বা কুলনাশা তান্ডব
চলতেই থাকবে।
এই তো তোমি।
এই তো তোমার বৈশাখ।
কখনো ভাসাবে, কখনো হাসাবে
কখনো জাগাবে প্রেম।

আমি আবারও হাটতে থাকি পিছু।
আমি আর তোমি।
তোমি আর আমি।
পথে কখনো বর্ষা, কখনো শীত।
হেমন্তের সোনালী মাঠ আর
শরতের কাশবন ধরে আমরা হাটতেই থাকি।
চৈত্রসংক্রান্তি শেষে আরও একবার
লাল শাড়ী পড়বে তোমি।
আর সেই শাড়ির আচল ধরে
চলে আসবে আরও একটি বৈশাখ।

★★★
রচনাকালঃ পহেলা বৈশাখ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।

স্বপ্ন ও সত্যি

তখন ছেলেটির বয়স প্রায় ১৩। হঠাৎ তার ভেতরে করেই একটি কবি মনের জন্ম হল। ছোট ছোট সব কবিতা। দেশের কবিতা, দশের কবিতা। সহজ, সরল সব পঙ্কতি। দুই বছর পর দেহ-মনে কি সব পরিবর্তন হল। শিশু ছেলেটি কিশোর হতেই মনে প্রেম জাগল। ভাললাগার ভালবাসার সব কথা চলে আসত কাব্যচরণে। কতগুলি ভাললাগার মাঝখানে একটি ভালবাসা আলাদা হয়ে গেল। ভালবাসার মান অভিমান সবই কাব্যাংশ হয়ে জমে থাকত ডায়রির পাতায়। কাব্য জগতের শুধু চিন্তায় নয়, চেতনায় মিশে গেল সে ভালবাসাটি। এক সময় কাব্যজগতের অস্তিত্বের সাথে মিশে ভালবাসা।

কাব্যরাজ্য যখন ভালবাসার পিছু ছুটছিল আছমকাই হারিয়ে গেল ভালবাসাটি। কাব্যরাজ্যে নেমে অস্থিত্বহীনতার অন্ধকার। তারপর, মৃতপ্রায় কাব্য মনটি হাহাকার করে। জীর্ণদশা কাব্য মনটির শেষ বেলার আর্তনাতটুকু আশেপাশের কাছে দূরের মানুষগুলির কাছে বিরক্তির জন্মই দেয় শুধু....

আর সেই ১৩ বছরের বালকটি, সে এখন এক স্বপ্ন ছাড়া যুবক। অন্যের স্বপ্ন পূরণ করাই এখন তার লক্ষ। নিজের স্বপ্ন যেখানে মৃত, জীবন একটা বোঝা ছাড়া কিছুই নয় সেখানে অন্যের স্বপ্ন পূরণ করা সহজ নয় তবুও যুবকটি প্রতিঙ্গাবদ্ধ কারণ তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছে সে তার অপরাজেয় পিতা। জীবনে যে হারেনি, পুত্রের কারণে সে নিশ্চয় হারতে পারেনা, তাই নয় কি?