অনেকদিন পর বর্ষাকে নিয়ে বেরিয়েছি। আজকাল ঘর থেকে ও বেরুতেই চায় না। হেমন্ত এই পৃথিবী ছেড়ে চলে জাবার পর ও যেন কেমন হয়েগেছে। হেমন্তই আমাদের একমাত্র সন্তান ছিল। মায়ের নাম যখন একটা ঋতুর নামে তখন ওর নামও একটা ঋতুর নামেই হওয়া উচিত বলে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু ও যে ঋতুর মতই সাময়িক হবে এটা বোঝার সাধ্য তো আর পৃথিবীর কারো ছিলনা।
বর্ষার সাথে আমার বিয়ের তিন বছর আট মাস পচিশ দিন। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হেমন্তের জন্ম। দিনগুলি কেমন জানি একটু বেশিই সুখে কাটছিল। কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল। সন্তান যে পিতা-মাতার কাছে কতটা আকাঙ্খিত সেটা খেয়ালী আমাকে হেমন্ত খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
বিকালটা মনোরম। কক্সবাজারের নীল জলরাশিতে আরেটু পরেই সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ঝড়ো হতে থাকবে সবাই। আমরা চলে এসেছি একটু আগেভাগেই। হোটেল রুমে বসে বসে মনমরা বর্ষাকে দেখতে কতক্ষণ আর ভাল লাগে? শেষ বার যখন সমুদ্রসৈকতে এসেছিলাম বর্ষা তটের ঢেউগুলির সাথে কিশোরীদের মত খেলা করেছিল। আজ নিঃশব্দে দাড়িয়ে রয়েছে। একটার পর একটা ঢেউ আছড়ে পরছে তার পায়ে। আমি খানিকটা দূরে বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে ঢেউ ভাঙ্গার সাথে মন ভাঙ্গার হিসাব মিলাচ্ছি।
- এই সম্রাট না?
এখানে পরিচিত কেউ থাকার কথা না, কিন্তু কণ্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত। পিছনে ফিরে দেখে অনেকটা ধাক্কার মতই হল। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম,
- মিথিলা তুই?
- কেমন আছেন?
বলে হাত বাড়িয়ে দিল সাথে থাকা মিথিলার স্বামী মাছুদ পারভেজ। আমি বর্ষার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
মিথিলার সাথে আমার শেষবারের মত দেখা হয়েছিল প্রায় পাচ বছর আগে। তখনিই পারভেজের সাথে আমার প্রথম ও শেষ দেখা হয়। তারও বছর দুই আগে থেকেই মিথিলা আমার প্রেয়সী ছিল, প্রেমিকা নয়। আমরা দুজনেই বিশ্বাস করতাম যৌনতা একটি স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা এবং দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তা করতে পারা উচিৎ। কথা বলতে বলতে আমরা একে অন্যের সাথে মিশে যেতাম। কথায় কথায় মিথিলা একবার আমাকে বলেছিল,
তুই আমার সতীত্বের সত্ত্বাধীকারী, এটা আমি তুকে দান করলাম। ওর মত এমন উদার মেয়েরা কি করে সতী থাকে সেটা এক বিশ্ময় তো বটেই। কোন এক অজানা কারনে দুই বছরে আমিও তার সতীত্ব হরণ করিনি। যা আমার তার প্রতি আমার কোন মোহ নেই। যা আমার নয়, যত দূর্নিবার আকর্ষণ তার প্রতিই। ও যেহেতু আমার প্রেমিকা ছিলনা, ওকে প্রায়শ বলতাম, “তোমি কখনোই শুধুই আমার নয়, আমিও নই শুধুই তোমার। তবুও তুমি আমার, আমি তোমার।’’
কিভাবে যেন হুট করেই ও বিয়ে করে ফেলল। ভালবেসে বিয়ে না পরিবার থেকে বিয়ে সেটা জানার ইচ্ছে থাকলেও প্রশ্নটা কখনো করা হয়নি। বিয়ের দুইদিন আগে তার হবুবর পারভেজকে নিয়ে এসে বলল, - আমি তুকে আমার সতীত্বের সত্ত্বাধীকারী করেছি। তুই চাইলে তা আমার স্বামীকে দান করতে পারিস কিংবা তুই ভোগও করতে পারিস। ওকে আমি সব বলেছি। ও কিছুই মনে করবেনা। কিন্তু সেদিন আমি কিছুই করিনি। পৌরুষত্বে আঘাত পেয়ে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছি।
তারপর পাঁচ বছর পর আবার দেখা হয়ে গেল। মিথিলাকে পেয়ে সময়টা আমরা একসাথেই কাটাচ্ছি। মিথিলার অদ্ভুদ সব কর্মকান্ডে বর্ষাও না হেসে থাকতে পারছেনা। বর্ষার সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠাটা আমার জন্য বিরাট এক স্বস্থির ব্যাপার। এজন্য মনে মনে আমি মিথিলার প্রতি কৃতজ্ঞ। বর্ষা একবার মিথিলাকে ওর বাচ্ছা-কাচ্ছার ব্যাপারে জিঙ্গেস করেছিল। মিথিলা বিষয়টাকে কেমনভাবে জানি এড়িয়ে গেছে। আমিও মনে মনে ভাবছিলাম ওদের মধ্যে কারো কোন সমস্যা নেই তো? প্রশ্নটা করার মত সময় ও পাচ্ছিলাম না।
ফিরছি এক সাথেই। চট্টগ্রাম থেকে রাতে ট্রেন। দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম পৌছে মিথিলা বলল এই ফাঁকে পতেঙ্গাটাও একবার দেখে যাবে। হাতে থাকা সময়টা পার করার জন্য হলেও আমরা এই অপশনটাকে বেছে নিলাম।
পারভেজ আর বর্ষা বিদগুটে কাঁকড়া ভাঁজা খাওয়াতে ব্যাস্ত। একটু দূরে মিথিলা আমার হারিয়ে যাওয়া হেমন্তের মত দুই বছরের একটা বাচ্চার দিকে নিষ্পলক আখিতে তাকিয়ে আছে। সুয়োগ পেয়ে আমি অনেকটা ব্যাঙ্গ করেই বললাম,
-বাচ্চা-কাচ্চা নিস না কেন এখনো? রোমান্সে ডিস্টার্ব হবে বলে?
ও ব্যাঙ্গ করেই বলল,
- তুই-ই তো সাত বছর আমার সতীত্ব বে-দখল করে রেখেছিস। রোমান্স আর করতে দিলি কই?
আমি এবার যথা সম্ভব গম্ভীর হয়ে বললাম,
- মানে?
- এর মানে তোর চেয়ে ভাল আর তো কারো জানা থাকার কথা নয়।
মিথিলা মুখে হাসি ধরে রেখেই কথাটা মিথিলা বলল, তবুও শেষ মুহূর্তে গলাটা অতি সূক্ষভাবে কেপে উঠল যেন। আমি বলতে চাইলাম,
- মিথিলা, আমি কি তোর চরণে একবার চুম্মণ করতে পারি?
কিন্তু না…।
এ প্রশ্ন করার যোগ্যতাও আজ আমার নেই। বাগযন্ত্র দিয়ে কোন শব্দই আসছে না যে…………।
#সতী #আসমাউল_হোসেন¬_কাওসার
বর্ষার সাথে আমার বিয়ের তিন বছর আট মাস পচিশ দিন। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হেমন্তের জন্ম। দিনগুলি কেমন জানি একটু বেশিই সুখে কাটছিল। কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল। সন্তান যে পিতা-মাতার কাছে কতটা আকাঙ্খিত সেটা খেয়ালী আমাকে হেমন্ত খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
বিকালটা মনোরম। কক্সবাজারের নীল জলরাশিতে আরেটু পরেই সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ঝড়ো হতে থাকবে সবাই। আমরা চলে এসেছি একটু আগেভাগেই। হোটেল রুমে বসে বসে মনমরা বর্ষাকে দেখতে কতক্ষণ আর ভাল লাগে? শেষ বার যখন সমুদ্রসৈকতে এসেছিলাম বর্ষা তটের ঢেউগুলির সাথে কিশোরীদের মত খেলা করেছিল। আজ নিঃশব্দে দাড়িয়ে রয়েছে। একটার পর একটা ঢেউ আছড়ে পরছে তার পায়ে। আমি খানিকটা দূরে বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে ঢেউ ভাঙ্গার সাথে মন ভাঙ্গার হিসাব মিলাচ্ছি।
- এই সম্রাট না?
এখানে পরিচিত কেউ থাকার কথা না, কিন্তু কণ্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত। পিছনে ফিরে দেখে অনেকটা ধাক্কার মতই হল। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম,
- মিথিলা তুই?
- কেমন আছেন?
বলে হাত বাড়িয়ে দিল সাথে থাকা মিথিলার স্বামী মাছুদ পারভেজ। আমি বর্ষার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
মিথিলার সাথে আমার শেষবারের মত দেখা হয়েছিল প্রায় পাচ বছর আগে। তখনিই পারভেজের সাথে আমার প্রথম ও শেষ দেখা হয়। তারও বছর দুই আগে থেকেই মিথিলা আমার প্রেয়সী ছিল, প্রেমিকা নয়। আমরা দুজনেই বিশ্বাস করতাম যৌনতা একটি স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা এবং দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তা করতে পারা উচিৎ। কথা বলতে বলতে আমরা একে অন্যের সাথে মিশে যেতাম। কথায় কথায় মিথিলা একবার আমাকে বলেছিল,
তুই আমার সতীত্বের সত্ত্বাধীকারী, এটা আমি তুকে দান করলাম। ওর মত এমন উদার মেয়েরা কি করে সতী থাকে সেটা এক বিশ্ময় তো বটেই। কোন এক অজানা কারনে দুই বছরে আমিও তার সতীত্ব হরণ করিনি। যা আমার তার প্রতি আমার কোন মোহ নেই। যা আমার নয়, যত দূর্নিবার আকর্ষণ তার প্রতিই। ও যেহেতু আমার প্রেমিকা ছিলনা, ওকে প্রায়শ বলতাম, “তোমি কখনোই শুধুই আমার নয়, আমিও নই শুধুই তোমার। তবুও তুমি আমার, আমি তোমার।’’
কিভাবে যেন হুট করেই ও বিয়ে করে ফেলল। ভালবেসে বিয়ে না পরিবার থেকে বিয়ে সেটা জানার ইচ্ছে থাকলেও প্রশ্নটা কখনো করা হয়নি। বিয়ের দুইদিন আগে তার হবুবর পারভেজকে নিয়ে এসে বলল, - আমি তুকে আমার সতীত্বের সত্ত্বাধীকারী করেছি। তুই চাইলে তা আমার স্বামীকে দান করতে পারিস কিংবা তুই ভোগও করতে পারিস। ওকে আমি সব বলেছি। ও কিছুই মনে করবেনা। কিন্তু সেদিন আমি কিছুই করিনি। পৌরুষত্বে আঘাত পেয়ে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছি।
তারপর পাঁচ বছর পর আবার দেখা হয়ে গেল। মিথিলাকে পেয়ে সময়টা আমরা একসাথেই কাটাচ্ছি। মিথিলার অদ্ভুদ সব কর্মকান্ডে বর্ষাও না হেসে থাকতে পারছেনা। বর্ষার সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠাটা আমার জন্য বিরাট এক স্বস্থির ব্যাপার। এজন্য মনে মনে আমি মিথিলার প্রতি কৃতজ্ঞ। বর্ষা একবার মিথিলাকে ওর বাচ্ছা-কাচ্ছার ব্যাপারে জিঙ্গেস করেছিল। মিথিলা বিষয়টাকে কেমনভাবে জানি এড়িয়ে গেছে। আমিও মনে মনে ভাবছিলাম ওদের মধ্যে কারো কোন সমস্যা নেই তো? প্রশ্নটা করার মত সময় ও পাচ্ছিলাম না।
ফিরছি এক সাথেই। চট্টগ্রাম থেকে রাতে ট্রেন। দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম পৌছে মিথিলা বলল এই ফাঁকে পতেঙ্গাটাও একবার দেখে যাবে। হাতে থাকা সময়টা পার করার জন্য হলেও আমরা এই অপশনটাকে বেছে নিলাম।
পারভেজ আর বর্ষা বিদগুটে কাঁকড়া ভাঁজা খাওয়াতে ব্যাস্ত। একটু দূরে মিথিলা আমার হারিয়ে যাওয়া হেমন্তের মত দুই বছরের একটা বাচ্চার দিকে নিষ্পলক আখিতে তাকিয়ে আছে। সুয়োগ পেয়ে আমি অনেকটা ব্যাঙ্গ করেই বললাম,
-বাচ্চা-কাচ্চা নিস না কেন এখনো? রোমান্সে ডিস্টার্ব হবে বলে?
ও ব্যাঙ্গ করেই বলল,
- তুই-ই তো সাত বছর আমার সতীত্ব বে-দখল করে রেখেছিস। রোমান্স আর করতে দিলি কই?
আমি এবার যথা সম্ভব গম্ভীর হয়ে বললাম,
- মানে?
- এর মানে তোর চেয়ে ভাল আর তো কারো জানা থাকার কথা নয়।
মিথিলা মুখে হাসি ধরে রেখেই কথাটা মিথিলা বলল, তবুও শেষ মুহূর্তে গলাটা অতি সূক্ষভাবে কেপে উঠল যেন। আমি বলতে চাইলাম,
- মিথিলা, আমি কি তোর চরণে একবার চুম্মণ করতে পারি?
কিন্তু না…।
এ প্রশ্ন করার যোগ্যতাও আজ আমার নেই। বাগযন্ত্র দিয়ে কোন শব্দই আসছে না যে…………।
#সতী #আসমাউল_হোসেন¬_কাওসার